ব্যাংকে টাকা রাখতে কত টাকায় দিতে হবে কর

ব্যাংকে টাকা রাখতে কত টাকায় দিতে হবে কর

ব্যাংকে রাখা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে রাজস্ব বিভাগ। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ–সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। তবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকার দিকে নজর দেওয়া হতে পারে।

এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছিল সরকার। দুই অর্থবছর বিরতি দিয়ে এ শুল্ক আবারও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এক বছরের মধ্যে যেকোনো সময় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ টাকা জমা টাকার ওপর কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত স্থিতির ওপর ১৫০ টাকা দিতে হয়, যা আগামী বাজেটে ২০০ টাকা হতে পারে। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা হতে পারে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক নতুন করে সাজানোর ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ যেমন বাড়তে পারে, তেমনই আবার শুল্কের স্তরও বাড়ানো হতে পারে। বছরে একবারই আবগারি শুল্ক বসে।

বর্তমানে এক লাখ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের স্থিতিতে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। আবার এক লাখ থাকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা এবং পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুটি স্তরে কোনো পরিবর্তন আসছে না। ব্যাংক হিসাবের টাকা বছরে অন্তত একবার এসব স্তর স্পর্শ করলে আবগারি শুল্ক দিতে হয়।

বর্তমানে ১০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত যে স্তরটি রয়েছে, সেটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত গচ্ছিত টাকায় আগের মতোই তিন হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হবে। আর ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসতে পারে।

১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান স্তরটিও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১ কোটি টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হতে পারে। এখন ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতে ১৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক বসে।

কারও ব্যাংক হিসাবে বছরে একবার যদি স্থিতি ৫ কোটি টাকা অতিক্রম করে, তাহলে সেই আমানতের ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে। এখন এই স্তরে ৪০ হাজার টাকা দিতে হয়।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে।

তবে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ার‌ম্যান নূরুল আমিন বলেন, বর্তমানে ব্যাংক আমানতকারী থেকে ছয় ধরনের চার্জ কাটা হয়। এ অবস্থায় নতুন করে আবগারি শুল্ক বাড়ানো একেবারেই অযৌক্তিক। ব্যাংক আমানত থেকে সহজেই রাজস্ব কেটে রাখা সম্ভব।  তাই এভাবে শুল্ক বাড়ানো হলে জনগণ ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে করে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে যারা এক্সাইজ ডিউটির আওতায় আসবে অর্থাৎ ২ লাখ টাকার ওপরে হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় ৯৯ লাখ। আর এক কোটির ওপর হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার। 

এদিকে কর ফাঁকি এড়াতে ফার্নেস, বেইজ ও লুব্রিকেন্ট তেলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়াতে যাচ্ছে এনবিআর। ফলে আমদানিকারকদের মিথ্যা ঘোষণার কারণে বর্তমানে হাতছাড়া হওয়া প্রায় ৯০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের আশা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েলের ট্যারিফ মূল্য দ্বিগুণ হতে পারে। অন্যদিকে বেইজ তেল ও লুব্রিকেন্ট তেলের ট্যারিফ বিদ্যমান স্তর থেকে ৫০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে। বর্তমানে ফার্নেস তেলের ট্যারিফ মূল্য প্রতি টনে ২৬৫ ডলার। বেইজ তেল (লুব্রিকেন্ট তেল তৈরির একটি কাঁচামাল) ও লুব্রিকেন্টে তেলের ট্যারিফ মূল্য যথাক্রমে ৭০০ ও দুই হাজার ডলার। এ ছাড়া এ তিন ধরনের তেলের মোট করহার যথাক্রমে ৩৪ শতাংশ, ৩১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ।