কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা অতিক্রম করেছে!

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।

ইদের আগে ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হলেও এখন তা ৪০০ টাকার ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ঈদের পর বাজারে এসে মরিচ কিনতে রীতিমতো ঘামছেন ক্রেতারা।

দাম বেড়েছে আলু, শসা, গাজরেরও। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সবজির দামও চড়া।

রবিবার রাজধানীর গোপীবাগ, কাপ্তান বাজার, রামপুরা কাঁচা বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রামপুরা কাঁচা বাজারে দেশি জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড জাতের মরিচ মিলছে ৩৮০-৩৯০ টাকায়।

এ বাজারের বিক্রেতা আবদুল হক  দি মিরর এশিয়াকে  বলেন, ‘ঈদের আগে ২৮০-২৯০ টাকা করে মরিচ  বিক্রি করেছি। এখন কেনায় পড়ছে ৩৬০ টাকা। পরিবহন খরচসহ সেটা প্রায় ৩৮০-৩৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। ৪০০ টাকার নিচে কীভাবে মরিচ বেচবো?’

তার ভাষ্য, ‘সিন্ডিকেট করে আড়তদাররা, আমরা তো করি না। খুচরা বিক্রেতারা কারওয়ান বাজার থেকে কিনি। অল্প লাভে বিক্রি করি। অথচ ক্রেতারা এসে বাড়তি দাম নিয়ে ঝামেলা করে আমাদের সঙ্গে।’

একই কথা জানান গোপীবাগ বাজারের বিক্রেতা হামিদুল। তিনি বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় মাত্র ১০ কেজি এনেছি। ক্রেতারা ২০ টাকার মরিচ চান। কেমনে দিমু? ২০ টাকায় তো ৫০ গ্রামও দেওয়া যায় না। আগামীকাল ১০০ গ্রাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পাবেন না।’

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান দি মিরর এশিয়াকে বলেন, ‘কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। কাঁচা মরিচে বাংলাদেশের স্বয়ং সম্পূর্ণতা নেই। তাই  প্রায় ৩০ শতাংশ কাঁচা মরিচ ভারত থেকে আমদানি করতে হয় । আমি আশা করছি ভারত থেকে আমদানি করলে কাঁচা মরিচের দাম কমে আসবে।’

দুই বছর আগের মতো কেজি প্রতি দাম ১০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে অবশ্যই তখন বুঝতে হবে এ বাজারে সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। যদি দেশে বড় ধরনের বন্যাও হয়, কোনোভাবেই কাঁচা মরিচের দাম ১০০০ টাকা হতে পারে না। যদি কেজি প্রতি মরিচের দাম ১০০০ টাকা হয়ে থাকে, অবশ্যই সরকারের যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সিন্ডিকেটকে ভাঙতে হবে। কীভাবে ভাঙবে সেই পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে।

দুই বছর আগে ঈদুল আজহার আগে থেকে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি নিয়ে যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার দ্রুত সমাধান দেয়া হয়েছে আমদানির অনুমতি দিয়ে। সেই বছর ২৪ আগস্ট থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল, কিন্তু  ২০২২ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ১০ মাস পর ৪৮ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

আমদানি বন্ধের কারণ ছিল দেশের কাঁচা মরিচ উৎপাদনকারী কৃষকেরা যেন ন্যায্য মূল্য পায়। আমদানির কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেলে মরিচের দাম কমে, আর তাতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দেশে কাঁচা মরিচের চাহিদা বছরে গড়ে ১৫ লাখ টন, যার প্রায় শতভাগ দেশেই উৎপাদন করা হয়। খরা বা প্রাকৃতিক কারণে কম হলেও তা খুব বড় ধরনের ঘাটতি সৃষ্টি করে না। কাঁচা মরিচ রবি ফসল এবং বর্ষাকালেও হয়। বাণিজ্যিকভাবে কয়েকটি জেলায় বিশেষভাবে উৎপাদন হলেও ক্ষুদ্র কৃষক তাদের নিজের ব্যবহার এবং অর্থকরী ফসল হিসেবে জমিতে লাগান। বিশেষ করে যারা মিশ্র ফসলের চাষ করেন, তাদের ফসলের মিশ্রণের মধ্যে মরিচ অবশ্যই থাকে।