ওরিয়ন গ্রুপের ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ হাজার কোটি

দেশের তফশিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যবসায়ী গ্রুপ ওরিয়নের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১’শ ৪৫ কোটি ২২ লাখ ৫৪ হাজার ৬’শ ৬ টাকা। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমান ৮’শ ২০ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৫’শ ৫৯ টাকা। এর বাইরে ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা। গ্রুপটিতে মোট ১২৪টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই সচল নেই। সচল রয়েছে এমন ২২টি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বেলহাসা একম এন্ড এসোসিয়েটস লি.

কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের পদে আছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন সালমান ওবায়দুল করিম। এই কোম্পানিটি তফশিলি ১টি ব্যাংক থেকে ৫টি হিসাবের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছে ১’শ ৬৬ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৫’শ ৮ টাকা। এই কোম্পানিটির টিআইএনের পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি।

বেলহাসা একম জেভি লি.

১১ এপ্রিল ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করেছে। মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম চেয়ারম্যান, সালমান ওবায়দুল করিম এবং মাজেদ আহম্মেদ সাঈফ বেলহাসা স্পন্সর পরিচালক। তফশিলি ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানিটির ঋণ রয়েছে ৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬’শ ৪৮ টাকা।

কার্গো মেরিটাইম লি.

১৯ এপ্রিল ২০১২ সালে কার্যক্রম শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম চেয়ারম্যান এবং সালমান ওবায়দুল করিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন এই কোম্পানিটিতে। তফশিলি ১টি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৭’শ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির নামে। ঋণটি ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, যা এখনো পরিশোধ করেনি ওরিয়ন গ্রুপ।

ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড এসোসিয়েটস লি.

২৩ আগস্ট ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম, আরজুদা করিম নমিনি পরিচালক, নুদারাত এস করিম স্পন্সর/নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া ওরিয়ন পাওয়ার সোনাগাঁও রয়েছে কোম্পানি শেয়ার হোল্ডার হিসেবে। ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮টি হিসাব থেকে মোট ঋণ রয়েছে ৪’শ২৬ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৭’শ ৪৬ টাকা। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ রয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭’শ ৫টাকা। আর ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

আমার দেশ পাবলিকেশন্স লি.

এই কোম্পানিটির স্পন্সর ওবায়দুল করিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির নামে ২টি তফশিলি প্রতিষ্ঠানের ১৩টি হিসাব থেকে ৫১ কোটি ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮’শ ৬৮ টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৭’শ ১৭টাকা ঋণ ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ২০২১ সালের ২৪ মে বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর ওবায়দুল করিমকে ঋণখেলাপী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ স্থগিত করে দেন।

ডাচ বাংলা পাওয়ার এন্ড এসোসিয়েটস লি.

১ জুলাই ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিটিতে ওবায়দুল করিম চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। সালমান ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের আরো ২ সদস্যও এই কোম্পানির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩টি হিসাব থেকে মোট ১’শ ২ কোটি ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪’শ ৩০ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। এর মধ্যে ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৯’শ ৭৩ টাকার ঋণ ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এর বাইরে ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ১২ হাজার ৫’শ ১০ টাকার ননফান্ডেড ঋণও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। 

কোহিনূর কেমিকেলস কোম্পানি লি.

৫ মে ১৯৮৮ সালে কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিটিতে মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োজিত পরিচালক হিসেবে চেয়ারম্যন ও মোহাম্মদ এবাদুল করিম সরকার কর্তৃক নিয়োজিত পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ৪৪টি হিসাব থেকে মোট ৬২ কোটি ৩৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫’শ ৯ টাকা ঋণ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। এর মধ্যে ৮৭ হাজার ৭’শ ৫০ টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ রয়েছে। ব্যাংকের কিস্তি বকেয়া পড়েছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৩১ হাজার ১’শ ৪ টাকা। ননফান্ডেড গ্যারান্টি বাবদ ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ৪৬ হাজার ৪’শ ৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ঋণ পরিশোধ না করায় ওবায়দুল করিম এবং অন্যান্য পরিচালকদের ঋণ খেলাপী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট করে ঋণ খেলাপী তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার করানো হয়েছে।

ওরিয়ন এ্যগ্রো প্রোডাক্ট লি.

মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম চেয়ারম্যান ও সালমান ওবায়দুল করিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন এই কোম্পানিটিতে। ১টি তফশিলভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২টি হিসাব থেকে মোট ৪৮ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার ৭’শ ১৫ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির নামে।

ওরিয়ন ফুট ওয়্যার লি.

৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটিতে মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম রয়েছেন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে। ২টি ব্যাংকের ১২টি হিসাব থেকে ১৬ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৮’শ ৭২ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ১’শ ৭৮ টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।

ওরিয়ন গ্যাস লি.

১৪ মার্চ ১৯৯৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির নামে ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১২টি হিসাব থেকে ৪’শ ৮৯ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ৩’শ ৫৫ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ২১ হাজার ৩’শ ৬৮ কোটি টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৫’শ ৪৬ টাকা।

ওরিয়ন হোম এপ্লায়েন্স লি.

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিটির ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৫৭টি হিসাব থেকে মোট ঋণ রয়েছে ৩’শ ৩৪ কোটি ১০ লাখ ৭ হাজার ৫’শ ৬৪ টাকা।

ওরিয়ন ইনফ্রাস্টাকচার লি.

১২ মে ২০০৫ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির নামে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩টি হিসাবের অনুকূলে ৪’শ ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮’শ ৯৪ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

ওরিয়ন নিট টেক্রটাইল লি.

২৭ আগস্ট ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির নামে ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪’শ ৫৮টি হিসাব থেকে ২’শ ২৫ কোটি ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৬ টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০ কোটি ৮২ লাখ ৪৮ হাজার ৫’শ ৬৯ টাকা। 

ওরিয়ন অয়েল এন্ড শিপিং লি.

৩ জুন ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম। ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৬টি হিসাব থেকে মোট ২ হাজার ৫’শ ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ ৫৮ হাজার ২’শ ১৪ টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ৪’শ ৩ কোটি ৯৯ লাখ ২ হাজার ৮’শ ৫৬ টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এর বাইরে ননফান্ডেড ঋণ রয়েছে ৪’শ ৭৪ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ২১ টাকা।

ওরিয়ন ফার্মা লি.

মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম এই কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১’শ ৭টি হিসাব থেকে মোট ২ হাজার ২’শ ২৮ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৫’শ ৮৭ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নামে। এর মধ্যে ১’শ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩’শ ৪১ টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আর সাবস্ট্যন্ডর্ড বা সন্দেহজনক ঋণ হয়ে গেছে ১’শ ১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ৭’শ ৫১ টাকা। এবং ৫০ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫’শ ৯৭ টাকা কুঋণ বা ব্যাড লোন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে ব্যাংকগুলো। এর বাইরে ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ ২’শ ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ, ৯ হাজার ৫’শ টাকা এবং ১৫০ কোটি ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৪’শ ৯৯টাকা এলসি বা লেটার অব ক্রেডিট বাবদ ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ওরিয়ন ফার্ম লি. এর কাছে।

ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লি.

১ আগস্ট ২০১৭ সালে কার্যক্রমে আসা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম। ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮টি হিসাব থেকে মোট ৬’শ ৯৭ কোটি ৫২ লাখ ৩২ হাজার ২’শ ৩০ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির নামে। এর মধ্যে ৫০ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এর বাইরে ননফান্ডেড এলসি হিসেবে কোম্পানিটির কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ২২ কোটি ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩’শ ৬০ টাকা।

ওরিয়ন পাওয়ার লি.

২৫ জুলাই ২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির নামে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮টি হিসাব থেকে মোট ১ হাজার ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭’শ ১৮ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১’শ ৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এর বাইরে ননফান্ডেড ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং এলসি বাবাদ ১ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ৩’শ ২৯ টাকা পাওনা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের।

ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ ঢাকা লি.

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই কোম্পানিটির নামে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৬টি হিসাব থেকে মোট ১হাজার ৫৪ কোটি ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৪’শ ৫৬ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর এলসি বাবাদ বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ২’শ ৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

ওরিয়ন কাদেরিয়া টেক্সটাইল লি.

৩১ মার্চ ২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই কোম্পানিটির কাছে এলসি বাবদ একটি ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৪ কোটি টাকা।

ওরিয়ন টি কোম্পানি লি.

২৩ জুন ২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই কোম্পানিটির নামে ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭টি হিসাব থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৩৩ কোটি ৯ লাখ ১১ হাজার ৯৯ টাকা। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ হয়ে গেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৯’শ ৪২ টাকা। এর বাইরে ননফান্ডেড এলসি বাবদ বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

স্টার এক্সেসরিজ লি.

৪ জুলাই ২০০২ সালে কার্যক্রম শুরু করা এই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম। ৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪৫ টি হিসাব থেকে মোট ১৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯’শ ৯৯ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৭ হাজার ৯’শ ৯৫ টাকা ঋণ ইতিমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া ননফান্ডেড ব্যাংক গ্যরান্টি বাবদ ২০ লাখ ৫২ হাজার ৪’শ ৬ টাকা এবং এলসি বাবদ ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৯’শ ১৯ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা রয়েছে।

ব্যক্তিগতভাবে মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ১২৪টি কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বাইরে গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ওবায়দুল করিমের ঋণ রয়েছে ১হাজার ১’শ ২৯ কোটি ৩০ লাখ ৯২ হাজার ৯’শ ২ টাকা। এর মধ্যে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪’শ ৬৫ টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ওবায়দুল করিমকে ঋণ খেলাপী হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপী তালিকা থেকে নাম কাটিয়েছেন তিনি।

এছাড়া গত অর্থবছরের শেষ দিকে ৬ মে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক থেকে ওরিয়ন রিনিউয়েবলস মুন্সীগঞ্জ লি. কোম্পানিটির নামে ১ হাজার ৬’শ ৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ঋণ প্রস্তাব করা হয়েছে। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাস হয়ে যাবে। এই প্রকল্পে ব্যাংকের জামানত বা সিকিউরিটি মর্টগেজ হিসেবে যে সম্পদ দেখানো হয়েছে, মৌজা হিসেবে সেটির বাজার দর আছে সর্বোচ্চ ১’শ ৮০ কোটি টাকা। অথচ এসেট ভ্যলু দেখানো হয়েছে ৫’শ ৪০ কোটি টাকা।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওরিয়ন গ্রুপের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, বড় বড় শিল্পগ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে হাইকোর্টে রিট করে পুনঃতফশিল করে নিচ্ছে। আমরা যে সমস্যার কথা জানি, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে সমস্যা তার চেয়েও প্রকট। আমরা অনেক আগেই বলেছি, ব্যাংকিং খাত কলাপ্সড (ধসে গেছে)। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণ। সাথে আছে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি। ব্যাংকিং খাতে যে দুরবস্থা, তা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যার ফলে ঋণ খেলাপিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখানে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রন করছে যারা ঋণ খেলাপি তারাই, সে কারণে নিজেদের দক্ষতার অভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, পুরো অর্থনীতি তাদের হাতে চলে গেছে। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে, এ কারণেই তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

বাংলদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমদ বলেন, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পালটে বাংলাদেশ ব্যাংক যে আইন করেছে- সেখানে রেগুলার যারা ঋণ পরিশোধ করেন তাদের শতকরা ১০ শতাংশ সুদ দিতে হয়, আর যারা খেলাপি তাদের ঋণ আদায়ে ২ শতাংশ সুদ নেওয়া হচ্ছে। এ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে ৩৬ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ খেলাপি হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে যে টাকাটা সঞ্চালন হতো, সেটা হচ্ছে না। সার্কুলেট না হওয়ার ফলে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এবং মুলধনের যে বাজার সেটাও ভালো ভাবে চলছে না।

তিনি বলেন, ব্যাংকে টাকা নাই। এটা বড় সমস্যা। বাংলাদেশ ব্যাংক তার (খেলাপি ঋণের) আইন ৭ জানুয়ারি ইলেকশনের এক সপ্তাহ আগে এক বছরের জন্য নবায়ন করেছে। আবার, ব্যাংকের মালিক (পরিচালক) নয় জন ছিল, সংসদ সেটিকে বারো জন করে দিয়েছে। আইনকানুনকে দোষ না দিয়ে কী করা উচিত আপনারা লেখেন। কোনো ঋণ খেলাপি সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে চাইনা কারণ, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের শীর্ষ ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তারা এখন অনেক ক্ষমতাবান, আমি এদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ঋণ পুনঃতফশিল করার কাজটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক করে থাকে। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো সেই নীতিমালা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়।