পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীসহ ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের রেশনের দাম বৃদ্ধি

বাংলাদেশ পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীসহ ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভর্তুকি মূল্যে রেশন সামগ্রী হিসেবে বিতরণ করা চাল ও গমের দাম ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর, অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ এর ভিত্তিতে রেশন চালের দাম প্রতি কেজি ১১ টাকা এবং গমের দাম ১২ টাকা কেজি নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে বর্তমান রেশনের দাম প্রতি কেজি ১ টাকা ৯ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত ছিল।

অর্থ বিভাগের (বাজেট) উপসচিব নূর উদ্দিন আল ফারুক স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, চাল ও গমের বিক্রয়মূল্য সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০% নির্ধারণ করা হবে।

রেশন পণ্যের দামের সর্বশেষ সমন্বয় ১৯৯১ সালে হয়েছিল, প্রতিটি আইটেমের জন্য নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আসন্ন অর্থবছরের অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি। তবে হিসাব করে দেখা গেছে যে প্রতি টন চাল ও গমের মূল্য যথাক্রমে ৫৫,০০০ টাকা এবং ৬০,০০০ টাকা। চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক মূল্য ছিল প্রতি টন চালের জন্য ৫১,৮৯৪.৫৮৯ টাকা এবং গমের জন্য প্রতি টন ৪৭,৩০২.১৪০ টাকা।

উপরন্তু, রেশনে বিতরণ করা চিনি, মসুর ডাল এবং সয়াবিনের দাম বাড়বে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পাচ্ছেন। সেগুলো হলো- স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার অধিদপ্তর এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা দল, দুর্নীতি দমন কমিশন, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

চার সদস্যের একটি পরিবার প্রতি মাসে ৩৫ কেজি চাল ও ৩০ কেজি গম পায় ১ টাকা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায়। এ ছাড়া ৫ কেজি চিনি ৩ টাকা কেজি, ৮ কেজি মসুর ডাল ১ টাকা ২০ পয়সায় এবং ৮ লিটার সয়াবিন তেল ২ টাকা ৩০ পয়সায় পায়। বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমানে প্রতি কেজি ১ টাকা ২০ পয়সার চাল ও গম পায়।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রেশন চাল ও গমের দাম প্রতি কেজি ২ টাকার বেশি নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা আজীবন রেশন সুবিধা ভোগ করেন।

সরকার এই পণ্যগুলি বাজারের মূল্যে ক্রয় করে, হয় অভ্যন্তরীণভাবে বা আমদানির মাধ্যমে, এবং রেশন হিসাবে বিতরণ করে। এর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বার্ষিক ভর্তুকি প্রয়োজন। রেশন চাল ও গমের দাম বৃদ্ধি ভর্তুকির বোঝা কমাতে সাহায্য করবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর   চাল ও গমের দাম অনেক আগেই বাড়ানো উচিত ছিল। আমার একবার চেষ্টা করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেইভাবে হয়নি।

তিনি আরো বলেন, সব ধরনের রেশন পণ্যের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো উচিত এবং আরও সামঞ্জস্য করা উচিত, তবে রেশন ভর্তুকি একেবারে বন্ধ করার পক্ষে আমি না।

১৯৮২-৮৩ সালে এ এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ সর্ব প্রথম সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য রেশন সুবিধা চালু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।