দেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ বিদেশি ঋণের সুদ

দেশের অর্থনীতিতে বড় চাপ বিদেশি ঋণের সুদ

দেশের ইতিহাসে প্রথমবার বিদেশি ঋণের অর্থছাড় ১০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। কিন্তু গত দুই অর্থবছরে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে বিদেশি ঋণের অর্থছাড়ে ব্যর্থ হচ্ছে সংস্থাগুলো।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মাত্র ৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থছাড় করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বাকি এক মাসে সব মিলিয়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থছাড় করাও এখন শঙ্কার বিষয়। এর মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধই বেড়েছে ৪২ শতাংশ। আর এ অর্থবছর যত ঋণ এসেছে তার প্রায় ৪৪ শতাংশের বেশি ব্যয় হয়েছে আগের ঋণ পরিশোধে। অর্থাৎ, এই বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধই সবচেয়ে বড় চাপে ফেলছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে।

বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ৭০২ কোটি ডলারের অর্থছাড় হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ঋণ আর বাকি ৪০ কোটি ৫১ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছর বিদেশি ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে ঋণের অর্থছাড় হয়েছিল ৬৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের।

এ বছরের ১১ মাসে অর্থছাড় যা হয়েছে তার ৪৩ দশমিক ৭০ শতাংশই ব্যয় করতে হয়েছে আগের নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধে। এ বছর ঋণ পরিশোধ বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে বিদেশি ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩০৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের, গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারের। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে সবচেয়ে বেশি চাপ বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। বছরের ব্যবধানে শুধু সুদের ব্যয়ই বেড়েছে ৪২ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশের ঋণের প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ বছর শুধু বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতিই এসেছে ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ বা প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ৫৯৭ কোটি ৪৬ লাখ বা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেতে বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হচ্ছে। এসব শর্ত অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরো বাড়িয়ে তুলছে। সবশেষ একদিনে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ডলারের এই দর বৃদ্ধিতে চাপ তৈরি  হবে বিদেশি ঋণ পরিশোধে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসায় আরেক চাপ তৈরি হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে বড় অংশের জোগান আসে বিদেশি ঋণ সহায়তায়। এ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় এখন ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সুদহার বেড়ে যাবে। বাড়বে সংকট। বাড়তি ব্যয় জোগানে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। একই উদ্দেশ্যে প্রকল্প ঋণ বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে।