‘সরকার নিজেই টাকা পাচারের সুযোগ করে দিচ্ছে’

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে নির্ধারণ করায় বা ওভার ইনভয়েসের সুযোগ থাকায় ডলার পাচার বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছে বাংলাদেশে ফিনিশড লুব্রিক্যান্টস আমদানিকারকদের একমাত্র সংগঠন লুব্রিক্যান্টস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বর্তমান ডলার সংকটকালে এভাবে ডলার পাচার করার সুযোগ সৃষ্টির পেছনে হয়তো কোনো দুরভিসন্ধি লুকিয়ে আছে বলেও মনে করে অ্যাসোসিয়েশন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মাদ জমসের আলী।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি বলেন, দেশে বার্ষিক প্রায় ২,৭০,০০০ মেট্রিক টন লুব্রিকেন্টসের চাহিদার মধ্যে প্রায় ৬৫% ফিনিশড লুব্রিকেন্টস জোগান দিয়ে আসছে এই আমদানিকারকরা। এই সেক্টর প্রতি বছর সরকারের রাজস্ব খাতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের অবদান রাখছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি মেট্রিক টন ফিনিশড লুব্রিকেন্টসের নূন্যতম শুল্কায়ন মূল্য ধরা হয়েছে মিনারেলের ক্ষেত্রে ৩০০০ ডলার এবং প্রতি মেট্রিক টন সিনথেটিক লুব্রিকেন্টস অয়েলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ধরা হয়েছে ৫০০০ ডলার। ফিনিশড এবং সিনথেটিক লুব্রিক্যান্টসের প্রকৃত বাজার মূল্য ১৭০০ ও ২০০০ ডলার; সে হিসেবে মিনারেল লুব্রিকেন্টসের শুল্কায়ন মূল্য ৭০% এবং সিনথেটিক লুব্রিক্যান্টসের শুল্কায়ন মূল্য ১৫০% বৃদ্ধি করা হয়েছে।

‘বাজার মূল্য থেকে শুল্কায়ন মূল্য অতিরিক্ত ধার্য করার ফলে প্রতি মেট্রিক টন মিনারেল লুব্রিক্যান্টসে ১৩০০ ডলার এবং প্রতি মেট্রিক টন সিনথেটিক লুব্রিকেন্টসে ৩০০০ ডলার পাচার করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে করে সরকারি সুবিধায় নিশ্চিতভাবে অর্থপাচার বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের কারণে পরিবহন, বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিল্প কারখানা, কৃষি  উৎপাদন ও গার্মেন্টস শিল্পে খরচ বৃদ্ধি পাবে। যে কারণে সরকারের বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবে। লুব্রিক্যান্টসের মূল্য বৃদ্ধি হলে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সকল নি্যে পণ্যে। বিদ্যুতের দাম বাড়বে, এতে উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাবে, ফলশ্রুতিতে পণ্যসামগ্রীর মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।’

সভাপতি বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ফিনিশড লুব্রিক্যান্ট আমদানি করে। লুব্রিক্যান্টসের কাঁচামাল হচ্ছে বেইজ অয়েল, এই অর্থবছরে যার শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০। যার সঙ্গে ২৫০-৩০০ ডলার খরচ করলে ফিনিশড লুব্রিক্যান্টস তৈরি হয়। সেই ক্ষেত্রে ফিনিশড লুব্রিক্যান্টসের আমদানি শুল্কায়ন মূল্য ৩০০০ এবং ৫০০০ সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অযৌক্তিক।

অর্থপাচার রোধ, বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা, পরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ খাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ন্যায্যতার জন্য ফিনিশড লুব্রিক্যান্ট অয়েলের প্রস্তাবিত বাজেটে বাজার মূল্যর অতিরিক্ত শুল্কায়ন মূল্য পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক বাজারের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকৃত শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করার জন্য সংবাদ সম্মেলনে অনুরোধ জানান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।