বাড়ানোর পরও সরকারি রেশনের দাম দুস্থদের তুলনায় অনেক কম

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারি চাকরিজীবীদের রেশনের দাম বাড়ানো হলেও তা দুস্থ এবং খোলাবাজারের (ওএমএস) তুলনায় কম।

সরকারি ১০ প্রতিষ্ঠানের রেশনের চাল ও গমের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এতদিন সরকার রেশনের চাল ১ টাকা ৫০ পয়সা ও গম ১ টাকা ২০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করে আসছিল এবং এটা ছিল নির্ধারিত (ফিক্সড)। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রতি কেজি চালের দাম হবে ১১ টাকা ২০ পয়সা ও গম ৯ টাকা ২০ পয়সা। তবে দুস্থ পরিবারে জন্য সরকারের চালের মূল্য ১৫ টাকা এবং ওএমএস চালের মূল্য ধরা আছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। সে হিসাবে দুস্থ পরিবারের জন্য বরাদ্দ চাল ৩৪ শতাংশ এবং ওএমএসের চালের দাম ১৬৮ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সেনাবাহিনীসহ ১০ প্রতিষ্ঠানের চাল ও গমের দাম নির্ধারণ করা হয়।

অর্থ বিভাগ ২৪ জুন ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের জনবলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রেশনসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য পুনর্নির্ধারণ’ শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করেছিল।

১০ প্রতিষ্ঠানের রেশন পাওয়া চাকরিজীবীদের কাছে চাল ও গমের বিক্রয় মূল্য হবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাল ও গমের নির্ধারিত অর্থনৈতিক মূল্যের ২০ শতাংশ। বিভাগটি বলেছে, ‘অর্থ বিভাগ থেকে প্রতি অর্থ বছরের শুরুতে চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

আগামী অর্থ বছরের চাল ও গমের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে- চাল ৫৬ টাকা এবং গম ৪৬ টাকা।

রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা সরকারি চাকরিজীবী চার সদস্যের একটি পরিবার চাল ও গম মিলিয়ে পায় ৬০ কেজির বেশি। এ ছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল পেয়ে থাকেন তারা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান রেশনে চাও বিক্রি করে।

অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী, রেশনের চাল ও গম বিক্রি করা হবে ১০টি প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের জনবলের কাছে। এগুলোকে ‘বিশেষ জরুরি হিসেবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (সেনা, নৌ ও বিমান), বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কারা অধিদপ্তর, বেসরকারি প্রতিরক্ষা, অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

আগামী ১ জুলাই থেকে চাল ও গমের নতুন দর কার্যকর হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। আইএমএফের দিক থেকে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আছে। দাম বাড়িয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং সারের ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি চেষ্টা রয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানের কতজন রেশন পাচ্ছেন, তার একটি পরিসংখ্যানও তৈরি করা। এখান থেকেও সরকারের ভর্তুকি কমানো।

অর্থ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মোট ১০ প্রতিষ্ঠানের জনবল ১০ লাখের বেশি। তবে নতুন সিদ্ধান্তে কত টাকা সাশ্রয় হবে, সেই হিসাব এখনো করা হয়নি।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনবল আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের আওতায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী দেশে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৫ লাখ ১৭ হাজারের বেশি। ২০২৩ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী দেশে সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৭৫ হাজার, নৌবাহিনীতে ৩০ হাজার এবং বিমানবাহিনীতে ২১ হাজার সদস্য রয়েছেন।

আর এর বাইরে পুলিশ সদস্য রয়েছেন দুই লাখের বেশি। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বিজিবির সদস্য ৩৪ হাজার ৫৩০ জন। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিরক্ষা এবং অগ্নিনির্বাপণ অধিদপ্তরে প্রায় ১১ হাজার, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) ২ হাজারের বেশি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে এক হাজারের বেশি জনবল রয়েছে। এসএসএফ, এনএসআই ও কারা অধিদপ্তরের সদস্য সংখ্যা জানা যায়নি।

অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে ৩৫ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হচ্ছে। রেশন কার্ড দিয়ে ৩০ টাকায় চাল, ডাল, তেল, চিনি কেনার সুযোগ ১ কোটি পরিবার পাচ্ছে।

রেশনের চাল ও গমের দাম পুনর্নির্ধারণে অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্তটিকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এম বি মির্জা আজিজুল ইসলাম দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, আর্মিসহ ১০ সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাল ও গমের দাম আরো না বাড়ানোর একমাত্র কারণ হচ্ছে দেশের সর্বগ্রাসী মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে চাল ও গমের দাম কম বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ সব বাহিনীর রেশনের দাম রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা উচিত হবে না । গ্রামের দুস্থ পরিবার এবং ওএমএস চালের দাম সত্যি আরো কমানো উচিত। কারণ উচ্চমূল্যস্ফীতিতে একেকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের দেয়া চালের গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া উচিত। এসব নিত্যপণ্য খেয়ে বড় হচ্ছে একটা প্রজন্ম।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে রেশনে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ওপরে।