সুষ্ঠু নির্বাচনের সাথে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত: আসিফ নজরুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি একাধারে একজন কলাম লেখক, ঔপন্যাসিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন বিভাগ থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্লাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর জার্মানির বন শহরের এনভায়রনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের আগে তিনি কিছুকাল সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ের গণমাধ্যম নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এখনো নিয়মিত কলাম লেখেন। আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা কেমন?

আসিফ নজরুল: ১৯৮৫ সাল থেকে আমি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। তখন থেকে আমি পত্রিকার অবস্থার ওপর নজর রাখতাম। আমার দেখা মতো গণমাধ্যমের অবস্থা আগে কখনো এত খারাপ ছিল না। বর্তমান সময়ে আশংকার অনেক নতুন অবয়ব ফুটে উঠেছে। গণমাধ্যমের একটি অংশ সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর তল্পীবাহক হিসেবে কাজ করছে। আরেকটা অংশ ভয় পেয়ে টোন ডাউন করেছে বা সরকারের গুণকীর্তন করছে। আরেকটা অংশ খুবই স্ট্রাগল করছে, কোনো না কোনোভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদেরকে নানাভাবে দমন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: এ অবস্থার কারণ কি?

আসিফ নজরুল: এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। একটা কারণ হচ্ছে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার জন্য একের পর এক আইন হয়েছে এবং সেগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য। যেমন: ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে অনেক সাংবাদিককে ভোগান্তির মুখোমুখি করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আদালতকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করার চেয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োগে বেশি আগ্রহী মনে হয়েছে। আর এভাবে আইন ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংবাদপত্র দমন করা হচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দমন ও নিয়ন্ত্রণ। একটা সময় ছিল, সরকারি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বড় পত্রিকাকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এখন সরকারের সমালোচক বড় পত্রিকাকে ব্যাংক কিংবা অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিজ্ঞাপন দিতে ভয় পাচ্ছে। অর্থাৎ এখানে গণমাধ্যমকে আর্থিকভাবে নিষ্পেষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। পত্রিকার মধ্যে গ্রুপ ‍সৃষ্টির পায়তারা করা হয়। এমনকি পত্রিকার মালিকানা, যেভাবে ইসলামী ব্য্যাংক দখল করা হয়েছে সেভাবে দখলের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাপ ও হুমকি তৈরি করে মামলায় জড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ফাঁদে ফেলে বড় বড় পত্রিকার মালিকানা দখলের চেষ্টা চলছে। বড় বড় সম্পাদককে বিপদে ফেলার চেষ্টা চলছে। এই সরকারের আমলে এমন কোনো স্বাধীনচেতা সম্পাদক পাবেন না যারা বিপদে নেই।  বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ যাদের ওপর ভরসা করতো, আওয়ামী লীগের যাদের ওপর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল বিরোধীদল হিসেবে কাভারেজ পাওয়ার জন্য বা সরকারী দল বিএনপির সমালোচনা করার জন্য সেই সমস্ত পত্রিকা ও গণমাধ্যমগুলোও এখন বিপদে পড়ছে। যেমন: ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪; এমনকি সমকালের মালিকের বাড়িও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

প্রশ্ন: এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

আসিফ নজরুল: সরকার কোনোভাবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবশিষ্টাংশও রাখতে চায় না। ১৯৮৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে কখনই এমন শৃঙ্খলিত অবস্থায় দেখিনি। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেহেতু অনেক তথ্য চলে আসছে, সেহেতু বিদেশে থেকে যারা সংবাদ পরিবেশন করছেন বা ব্লগ করছেন, ইউটিউবার হিসেবে কাজ করছেন; তাদের দেওয়া সংবাদে একটা মুক্ত সংবাদ প্রবাহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেখানেও প্রচুর ভুল বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে যখন আমরা গণমাধ্যমের তুলনা করি, বোঝা যায় গণমাধ্যম এখন কতটা শৃঙ্খলিত। সরকারের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নিয়ে যখন বিদেশ থেকে প্রতিবেদন হয়, যেমন ডয়চে ভেলে করলো বা আল জাজিরা করলো ওই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই সংবাদ পর্যন্ত দেশীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ফলে গণমাধ্যম যে শৃঙ্খলিত এটা একটা প্রকাশ্য সংকট; আর তারা যে শৃঙ্খলিত এটা যে সবাই জেনে ও বুঝে গেছে এটা দ্বিতীয় সংকট। এজন্য সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমছে, সংবাদপত্রের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমছে। সংবাদপত্রকর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। একশ্রেণির সরকারের তল্পীবাহক সম্পাদক ও মালিক বাদে বাকি সবাই খুব দুরবস্থার মধ্যে আছে।

প্রশ্ন: এক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশিপেরও তো অভিযোগ রয়েছে?

আসিফ নজরুল: সাংবাদিকরা খবর সেলফ সেন্সর করছে। সরকারের তল্পীবাহকরা খবর প্রকাশ না করে সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগসুবিধা নিচ্ছে। যারা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের চর্চা করতে চায় এরা তাদের সরাসরি প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। ব্যক্তি পর্যায়ে টার্গেট করা হচ্ছে। মালিকরা লোভী হয়ে যাচ্ছে বা যারা ভয় পাচ্ছে। তারা সম্পাদকের মাধ্যমে সংবাদকর্মীকে দমানোর চেষ্টা করছে। সেলফ সেন্সরশীপ খুব আনন্দের সঙ্গে বা স্বেচ্ছায় হচ্ছে বলে আমি মনে করি না। কিছুটা স্বেচ্ছায় হচ্ছে, অনেকাংশে ভীতিকর পরিবেশ এবং সংবাদপত্রের ভেতরের কিছু লোক সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বলে হচ্ছে।

গত ১৫ বছরে বেশকিছু নতুন সংবাদমাধ্যম বাজারে এসেছে। এই নতুন সংবাদমাধ্যম বা পত্রিকার মালিকানায় তারাই এসেছে যারা এই সরকারের আমলে বিভিন্নভাবে শতশত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের টাকা লোপাট করা, বিদেশে পুঁজি পাচারের হাজার হাজার টাকা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তারা যদি সংবাদপত্র চালু করে তখন তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে আর বাকি থাকে না। বর্তমানে গণমাধ্যমকে নিজেকে রক্ষা করা, আর প্রতিপক্ষকে অ্যাটাক করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, একদলীয় বা এক ব্যক্তির শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। এখানে জবাবদিহিতা বলতে কিছু নেই। যে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে সে একচ্ছত্র সুযোগসুবিধা পাবে, তার কোনো বিচার নেই। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব সংবাদপত্র শিল্পেও পড়েছে।

প্রশ্ন: তাহলে সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ কী?

আসিফ নজরুল: আমি মনে করি, সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু না। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ যতদিন না পরিষ্কার হবে, ততদিন পর্যন্ত সংবাদপত্রের ভবিষ্যত আমরা ফিরে পাব না। সংবাদপত্র অধপতিতভাবে যেতেই থাকবে। তবে একটা আশার আলো হচ্ছে, আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকল্প কিছু করার সুযোগ থাকছে। রাজনীতির বাইরের বিষয়ে অল্প কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতা করার সুযোগ আছে। তারপর অনলাইনে কিছুটা কাজ করা যাবে। তবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকা পারবে কতোটুকু পারে ঠিক জানি না। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত না হলে, ক্ষমতাসীনদের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত না হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দুইটা বিচ্ছিন্ন বিষয় না। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, সংবাদপত্রের অনেকেই  বিষয়টি বোঝেননি, তারা এই দেশে একদলীয় সরকারব্যবস্থা কায়েমের পেছনে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখেছেন। বিরোধীদল বিএনপিকে সাইজ করতে তাদের উদ্যমী ভূমিকা ছিল। বিএনপির যতই শক্তি ক্ষয় হয়েছে, ততই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আরও বিপর্যস্ত হয়েছে। এক শ্রেনীর সংবাদপত্র বিএনপিকে সাইজ করতে গিয়ে নিজেরাও সাইজ হয়ে গেছে।  তাদের বোঝা উচিত ছিল যে, একটা দেশে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শক্তিশালী বিরোধীদল থাকতে হয়। আপনি বিরোধীদলের খারাপ জিনিসের সমালোচনা অবশ্যই করবেন। কিন্তু সরকারি দলের খারাপ কাজ করার ক্ষমতা, সুযোগ ও সামর্থ্য অনেক বেশি। সরকারি ক্ষেত্রে এই সমালোচনা তাই অনেক বেশি করতে হবে। বিএনপি সরকারে থাকলে বিএনপিরও সমালোচনা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে একইভাবে সমালোচনা করতে হবে। আপনি যদি সংবাদপত্র হয়ে পক্ষপাতিত্ব করেন তাহলে এর পরিণতি কেমন হয় তা এখন দেশের গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হওয়ার পর সবারই অনুধাবন করা উচিত।

প্রশ্ন: সারা পৃথিবীতে গণমাধ্যম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম তো লক্ষ্য করার কথা নয়?

আসিফ নজরুল: এটা নিয়ে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি। কিন্তু সারা পৃথিবীতে সংবাদপত্রের এত খারাপ অবস্থা হয়নি। ব্রিটেনে, আমেরিকায় বা জার্মানিতে কেউ স্বাধীন সাংবাদিকতা করলে তার মালিকানা বদল করে লুটেরা পুঁজির মালিককে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় না। আপনার কি মনে হয় ওখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আছে সাংবাদিক দমন করার জন্য? আপনার কি মনে হয় ওখানে সাংবাদিক হত্যা করা হয়? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পশ্চিমাবিশ্বে মোটেও ক্ষুণ্ণ হয়নি। কীভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে. দেখুন। ভারত, দক্ষিণ এশিয়া বা আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটু বেশি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে তার প্রতিটি দেশে গণতন্ত্রও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আপনি বিভিন্ন র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দেখলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেসব দেশে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ণ হয়েছে সেসব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। বাংলাদেশের মতো এতবেশি ক্ষুণ্ণ খুবই কম ক্ষেত্রে হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বাংলাদেশে, র‌্যাংকিং দেখলে বিষয়টি বোঝা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্র বাংলাদেশে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত বাংলাদেশে।

প্রশ্ন: এখান থেকে পরিত্র্রাণের পথ কী? সাংবাদিকরা কী করতে পারে ও সুশীল সমাজ কী করতে পারে?

আসিফ নজরুল: সবাইকে মিলে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিভাজন বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। একটা দল কর্তৃক আরেকটা দলকে নিপীড়ন করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র কখনও অংশ হতে পারে না। এমন হলে একটি পর্যায়ে গিছে আপনি নিজেই ধরাশায়ী হয়ে যাবেন।

প্রশ্ন: আপনিতো ভয়ের কথা বলছিলেন। কাজ পাওয়ার জন্য বা স্বার্থ হাসিলের জন্যও অনেকে সংবাদপত্রকে ব্যবহার করছে...

আসিফ নজরুল: দেশে যদি গণতন্ত্র থাকে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন খারাপ সরকার বা যারা অত্যাচার করেছে সংবাদপত্রকে দমন করেছে তাদের ক্ষমতায় থাকার কথা না। পরে অন্য কোনো সরকার যখন এমন করবে তারাও থাকতে পারবে না। ১৯৯১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশে পাঁচবছর পরপর সরকার পরিবর্তন হতো। পাঁচবছর পরপর সরকার পরিবর্তন হলে কোনো সরকারই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চরমভাবে বিপর্যস্ত করার দুঃসাহস দেখাবে না। এজন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের সাথে  সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের বুঝতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিপক্ষ শক্তির সাথে গাটছড়া বেধে তাদের ভবিষ্যৎ ও বর্তমানকে তথাকথিত সাংবাদিক নেতারা কীভাবে বিপর্যস্ত করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এগুলো এক্সপোসড করতে হবে। দরকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।

সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের আন্দোলন করতে গিয়ে সাংবাদিক নেতা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন; তার বিরুদ্ধে লেখে না কেউ। এমন অনেক লোক আছেন যারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত করার পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। এদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আছে।

প্রশ্ন: আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কথা বললেন। এখানে সত্য-মিথ্যার একটা বিষয় থাকে...।

আসিফ নজরুল: সেটা থাকে। কিন্তু এখানে নতুন নতুন ইনোভেটিভ পথ আসছে। যেমন: এদেশে কেউ কেউ এখন ফ্যাক্ট চেকিং বরছেন। এছাড়া, অন্যান্য দেশে সাংবাদিকরা স্ট্রাগল পিরিয়ডটা কীভাবে মোকাবিলা করেছে সেগুলো দেখতে হবে। এখনো বোধহয় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কিছুটা স্বাধীনতা আছে। এসব জায়গায়গুলো নিয়ে আরো চর্চা করতে হবে।  গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প নেই। দেশের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের অন্তত এটি বুঝতে হবে।