বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমে না: আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ এক ভিন্ন ধরনের জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। তবে এখান থেকে অথনীতি ধসে পড়বে না। সংস্কার না হওয়ার কারণে হয়তো বাংলাদেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে না। এমনটিই মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

দ্য মিরর এশিয়া: বাংলাদেশের অর্থনীতি এই জায়গা থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে পারে?

আহসান এইচ মনসুর: দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে হলে প্রথমেই যেটা দরকার বাংলাদেশের টাকার মান বাড়াতে হবে। ডলারের দাম স্থিতিশীল রেখে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ভালো করতে হবে। এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন। এটা যাতে কমে না যায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুসারে রাখা যেতে পারে।

দ্য মিরর এশিয়া: ব্যাংকিং সেক্টরে এখনও কেন সংস্কার করতে পারলো না সরকার? 

আহসান এইচ মনসুর: এ সংস্কার না করতে পারলে দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হবে। ব্যাংকের মার্জার এখনও হলো না। এই রকম অবস্থা চলতে থাকলে সেখান থেকে দেশের অর্থনীতি নিয়ে উঠে আসা কঠিন হবে।

দ্য মিরর এশিয়া: বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে খরচ কমাতে চাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিও কমে গেছে।

আহসান এইচ মনসুর: আমদানি কমে গেলে অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রভাব পড়বেই। অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানো যেতেই পারে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ভারসাম্য আনতে হবে। ক্যারন্ট একাউন্টে ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। 
 
দ্য মিরর এশিয়া: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতিও এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে? 

আহসান এইচ মনসুর: আগে নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেও এবার রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এবার নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে ভিন্ন একটি দেশের জড়ানো এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অবস্থার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

দ্য মিরর এশিয়া: আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি কি পাচ্ছে বাংলাদেশ?

আহসান এইচ মনসুর: আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। শিগগিরই এ বিষয়ে জানা যাবে। বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ১১৫ মিলিয়ন ডলার পাচ্ছে। যদি না কোনো বড় শক্তি ভিন্ন কিছু করতে না চায় তাহলে বাংলাদেশ এটি পাবে। বাংলাদেশের এবারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে ভিন্ন দেশ যুক্ত আছে। এটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তারপরও আইএমএফের ঋণ ছাড়ের পথে কেউ বাধা হবে বলে মনে হয় না। আবার এমন দৃষ্টান্তও আছে। অতীতে আফ্রিকার দেশ সুদানকে আইএমএফের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ঘোষণার আগের দিন উল্টো ঘোষণা আসে।

দ্য মিরর এশিয়া: বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি?

আহসান এইচ মনসুর: অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঝুঁকি তৈরি করছে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমে না। এর কারণ, মুষ্টিমেয় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ থাকা। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে লক্ষ্য ৬.৫ শতাংশ ঠিক করলেও লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

দ্য মিরর এশিয়া: মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কী হবে? 

আহসান এইচ মনসুর: ডলারের বিনিময় হার হঠাৎ করে বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এজন্য আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক ১১৭ টাকা ধার্য করেছে। এজন্য ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের যে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে তা ভুয়া, অসত্য। বাজারে ডলারের একাধিক বিনিময় হার থাকার কারণে ব্যাংকগুলো এটি করে থাকে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী।

দ্য মিরর এশিয়া: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কি ধরে রাখতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক? 

আহসান এইচ মনসুর: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যেখানে আছে সেখানে ধরে রাখতে হবে। সেটা ১৭ থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে ধরে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সেটা পারবে; সেটার জন্য চেষ্টা করছে। এজন্য বাংলাদেশ বন্ধু-রাষ্ট্রের কাছ থেকে ধার নেওয়ার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব, চীন বা ভারতের কাছ থেকে দুই বিলিয়ন ডলার ধার পেতে পারে। তবে এটি শ্রীলঙ্কার মতো পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার মতো ধার নয়। এই ডলার ধার শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো পর্যায়ে না যাওয়ার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে।

দ্য মিরর এশিয়া: বাজেট ঘোষণায় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালোটাকা সাদা করার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আহসান এইচ মনসুর: সাধারণত করদাতা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দেবে আর কালোটাকার মালিক ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রক্ষা পেয়ে যাবে এটা হতে পারে না। কালেটাকা সাদা করার ১৫ শতাংশ কর নিয়েও প্রশ্ন আছে।

দ্য মিরর এশিয়া: রাজস্ব আদায় কীভাবে বাড়ানো যায়?

আহসান এইচ মনসুর: রাজস্ব আদায় বাড়ানো পুরোপুরি অটোমেশন ছাড়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে করদাতা ও আদায়কারীর মধ্যে সরাসরি দেখা হওয়া বা ফোনে যোগাযোগ হওয়ার মতো মাধ্যম রাজস্ব বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে এসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

দ্য মিরর এশিয়া: আপনাকে ধন্যবাদ।

আহসান এইচ মনসুর: দ্য মিরর এশিয়াকেও ধন্যবাদ।