পঞ্চগড়ে ‌‘ভারতের আপত্তিতে’ বন্ধ চীনা-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হাসপাতালের কাজ

পঞ্চগড়ে ‌‘ভারতের আপত্তিতে’ বন্ধ চীনা-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর হাসপাতালের কাজ

পঞ্চগড়ে ‘ভারতের আপত্তির কারণে’ বাংলাদেশি ও চীনা ব্যবসায়ীর যৌথ অর্থায়নে নির্মিতব্য ১ হাজার শয্যার একটি আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি মালিকানাধীন ‘নর্থপয়েন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল’ নামের ওই প্রকল্প গত বছরের এপ্রিলে তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী  উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মাজহারুল হক প্রধান ও ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তবে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকল্পের মূল স্থাপনা নির্মাণ শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়াপাড়া এলাকায় নর্থ পয়েন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লেখা ব্যানার ঝুলছে। সবুজ রঙের টিনের গেটও আছে একটি। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল এলাকাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিন ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা গেল। ৩৫ একর জমির বিশাল এলাকাটি তারাই পাহারা দিয়ে রাখেছেন। হাসপাতালের কাজ কবে শুরু হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।

সূত্র জানায়, চীনা ব্যবসায়ী চুয়াং লি ফং ও বাংলাদেশি নাগরিক জাহাঙ্গীর আলম রানার যৌথ উদ্যোগে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এটি। ইতিমধ্যে জমি কেনা ও প্রাথমিক স্থাপনা বাবদ খরচ হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। এ অবস্থায় নিরাপত্তা ইস্যু দেখিয়ে কাজ বন্ধ করতে চাপ দেয় ভারত। যার প্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ রয়েছে। উদ্যোক্তারা ঢাকার চীনা দূতাবাসকে বিষয়টি জানান। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত। সেখানে উদ্যোক্তাদের ডেকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় তাদের ঢাকার আশপাশে পাঁচ থেকে সাত একর জমি নেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে উদ্যোক্তরা তাতে রাজি হননি।

তারা জানান, প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি ভারতে যান। এর মধ্যে একটি বড় অংশ যান পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় এবং বৃহত্তর রংপুরে ভালো মানের হাসপাতাল না থাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের উদ্যেশ্য ছিল, এখানে উন্নত মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের রোগীরা বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। এতে দেশের টাকা দেশে রাখার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সুযোগ ঘটত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম রানা পঞ্চগড়ের বাসিন্দা। আগে তিনি একটি দেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বর্তমানে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রকল্পে তার শেয়ার ৪০ ভাগ আর চীনা বিনিয়োগকারীর ৬০ ভাগ। চীনা ব্যবসায়ী চুয়াং লি ফং বাংলাদেশে ব্যবসা করেন। এখানে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে তার। জানা গেছে, চীনা এ ব্যক্তি তার লাভের টাকা কখনো নিজ দেশে নিয়ে যান না। বাংলাদেশেই বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে আসছেন। এ ছাড়া কয়েকজন ভারতীয় ব্যবসায়ী এ প্রকল্পে যুক্ত আছেন বলে সূত্র জানালেও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

পঞ্চগড়ের স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি মালিকানাধীন অপর একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্পের নাম ‘ইন্দো-বাংলা হাসপাতাল’। তাদের উদ্দেশ্য চিকিৎসায় বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করা। এ অবস্থায় নর্থপয়েন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল নির্মাণ হলে ওই বাজারে ভাগ বসাবে চীন। সে কারণে এ হাসপাতালটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নর্থপয়েন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের বাংলাদেশি উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম রানা দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে হাসপাতালটির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কবে নাগাদ শুরু করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আপাতত এ পর্যন্তই।

তিনি বলেন, ‘কী কারণে বন্ধ করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে জটিলতা রয়েছে’।