ঢাকা-রিয়াদ রাজনৈতিক বৈঠক: প্রাধান্য পাবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ক্রাউন প্রিন্সের সফর

বাংলাদেশ ও সৌদি আরব আগামী ১ জুলাই দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। যেখানে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বাংলাদেশি অভিবাসী, রোহিঙ্গা সংকট ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় তুলে ধরা হবে।

রবিবার (৩০ জুন) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রিয়াদে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত হতে যাওয়া এ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।

বৈঠকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, আইসিটি ও পর্যটন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান দুই দিনের সরকারি সফরে সোমবার ভোরে রিয়াদ পৌঁছাবেন। আগামী ৩ জুলাই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

যেহেতু বিনিয়োগ বিষয়ে নিয়ে বড় পরিসরে আলোচনার কথা রয়েছে তাই প্রতিনিধি দলে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

এছাড়াও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক পূর্ব ও পশ্চিম) নজরুল ইসলাম, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পশ্চিম এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক শফিকুর রহমান ও পরিচালক নাফিসা মনসুর ।

এ বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে; যা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সুসংহত করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদি যুবরাজ এ বছর বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। উভয় পক্ষ এটি চূড়ান্ত করার জন্য বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করতে পারে।

১৯৮৫ সালে তৎকালীন সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ঢাকা সফরের পর এটিই হবে কোনো সৌদি যুবরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর।

সৌদি নেতার সফরকালে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (এমওইউ ও চুক্তি) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করবে বলে উভয় পক্ষই আশা করছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১৬ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উভয় নেতা দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বিদ্যমান টেকসই সম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অবস্থানে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তারা দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ে বিদ্যমান বোঝাপড়া ও সদিচ্ছার কথা উল্লেখ করে এটিকে ফলপ্রসূ করার ওপর জোর দেন।

উভয় পক্ষই দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে কার্যকরী সমন্বয় ও একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে জোর দিয়েছে।

বেশ কয়েকটি সৌদি কোম্পানি এরই মধ্যে বাংলাদেশের কিছু খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং আরও কয়েকটি কোম্পানি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৃহত্তর সম্পৃক্ততার কথা বিবেচনা করছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি আরবে কর্মরত প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি সৌদি ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

চলতি বছরের মে মাসে কিংডম অব সৌদি আরব (কেএসএ) বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১৯৭৩-৭৪ সালে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়নের প্রচেষ্টার অগ্রগতি জানতে চেয়েছিল।

সে সময় এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন সৌদি উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদ।