অনুরোধ রাখা না রাখা সাংবাদিকদের বিষয়, বলছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ একের পর এক পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবাদলিপি পাঠায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। 

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদলিপিতে ব্যবহৃত ভাষাসহ এর প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। এমনকি সম্পাদক পরিষদও এর প্রতিবাদ জানায়। পাশাপাশি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠায়।

এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার সকালে গুলশানের দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম; যিনি একইসঙ্গে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আপনাদের কোনো অর্ডার করিনি।

‘সম্প্রতি গণমাধ্যম কয়েকজন পুলিশ সদস্যের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেছে। পুলিশ বাহিনী সবসময় বলে, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। এই জায়গাতে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রতিবাদ পাঠালো এবং এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলো।’ এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি ব্যক্তির দায় সংগঠনের বা বাহিনীর না। কিন্তু পাশাপাশি অতিরঞ্জিত এবং খণ্ডিত তথ্য থাকে। যেমন আমাদের এক কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছিল তিনি সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আসলে তিনি পালিয়ে যাননি।

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, সে কারণে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। প্রতিবাদলিপিতে আমরা কোনো নির্দেশনা দেইনি। আপনাদের কোনো অর্ডার করিনি। শুধু পুলিশ নয়, যেকোনো নিউজ করার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ করেছি। এটি পেশাগতভাবে আসলে যে কেউ করতে পারে। অনুরোধ রাখা না রাখা আপনাদের বিষয়। আপনাদের শুধু অনুরোধ করেছি।

গত ২৪ জুন টিআইবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংবিধান পরিপন্থী হুমকি। আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধের নামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। দেশের মূলধারার সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ বলেছে, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতি স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থি। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকর্মীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদলিপিতে এমন কিছু ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল যা হুমকিস্বরূপ। প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেছিল, ‘কোনো এক রহস্যময় কারণে একশ্রেণির গণমাধ্যম অতি সুকৌশলে পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে, যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর বলে পরিগণিত হয়। গণমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয়, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।’