গণমাধ্যমের দৃষ্টি ও সাধারণ মানুষ

ফরিদা আখতার

[১]

মাধ্যম মানেই গণমাধ্যম নয়। মাধ্যম ঘোর গণবিরোধী হতে পারে। সহজ ভাষায় গণমাধ্যম হচ্ছে যার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়; বিচ্ছিন্ন পাঠক, শ্রোতা বা দর্শক হিশাবে আমরা যে সকল মাধ্যমের সুবাদে ‘গণ’ বা জনগণে পরিণত হই তারাই গণমাধ্যম নামের যোগ্য। গণমাধ্যম আমাদের বিচ্ছিন্ন, একাকি ও নিঃসঙ্গ ব্যক্তি হিশাবে সমাজ বিযুক্ত থাকার অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়। গণমাধ্যম দ্বারা অন্য সকল মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকা ওবং নিজেদের সামষ্টিক সত্তা হিশাবে আমরা কল্পনা করতে ও ভাবতে শিখি। 

গণমাধ্যম সম্পর্কে আমাদের দেশের প্রচলিত ধারণা আসলে ভুল। আমরা অনুমান করি একজন প্রকাশক টাকা বিনিয়োগ করেন এবং সম্পাদক বসিয়ে একটি পত্রিকা বা ডিজিটাল মাধ্যম প্রকাশ বা প্রচার করলেই সেটা ‘গণমাধ্যম’ হয়ে যায়। না, হয় না। সেটা ঘোর গণবিরোধীও হতে পারে।  সেই মাধ্যমে বিভিন্ন সাংবাদিক বা লেখকেরা লেখালিখি করেন, সেখানে সংবাদ, নাটক, টক শো ইত্যাদি পরিবেশিত হয়। এটা হচ্ছে যে কোন মাধ্যমের সাধারণ ফাংশানাল দিক মাত্র। কিন্তু গণমাধ্যমের কারবার ‘গণ’ বা জনগণ’ নিয়ে। গণমাধ্যম ছাড়া আধুনিক ‘জাতিবাদ’ গড়ে উঠত না, কিম্বা তথাকথিত ‘প্রমিত’ ভাষা গড়ে তোলার তাগিদ তীব্র এবং অনিবার্য হোতো না। সবচেয়ে বড় কথা গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র অসম্ভব। এ নিয়ে একালের পণ্ডিতেরা বিস্তর লেখালিখি করেছেন। অথচ আমরা পুরাতন অথচ অতি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতাও আজকাল ভুলে গিয়েছে, সেটা হোল গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র কথাটারও কোন অর্থ নাই। অন্তঃসারশূন্য। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা চর্চা করবার কোন পরিসর গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র অসম্ভব।

গণমাধ্যম দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের আলোচনার খোরাক জোগাবার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিসরকে সজীব ও সক্রিয় রাখে। গণমাধ্যমের মধ্য দিয়েই আমাদের রাজনৈতিক সত্তা সক্রিয়, সচেতন ও বিকশিত হয়। যে কারণে গণমাধ্যম আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্গত বিষয়, আলাদা কিছু না। আধুনিক গণতন্ত্র বিশেষত পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের অনুমান হচ্ছে হিংসা ও হানাহানি পরিহার করে মানুষ তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে সামষ্টিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেটা আইন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বা প্রতিরক্ষা, যে কোন বিষয় হতে পারে। সেই দিক থেকে গণমাধ্যম মূলত ইনফর্মাল পার্লামেন্ট। অর্থাৎ জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের বাইরে গণমাধ্যম জনগণকে নীতি নির্ধারণসহ  রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করবার এবং যুক্ত রাখবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। যারা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আছেন গণমাধ্যম তাদের কাজের সহায়ক ভুমিকা রাখে। ঠিক যে মাধ্যম শুধু বিনোদন, কিম্বা বিশেষ বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। মাধ্যমের ভূমিকা বিচার করা আলাদা একটা কাজ। কিন্তু যখনই আমরা ‘গণমাধ্যম’ কথাটা উচ্চারণ করি, তৎক্ষণাৎ আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আবশ্যিক, অনিবার্য এবং অঙ্গাঙ্গী একটি পরিসরের কথা বলি, যার শক্তিশালী উপস্থিতি ছাড়া গণতন্ত্র কথাটা অশ্বডিম্বে পরিণত হয়।

গণমাধ্যম নির্মোহ ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে জনগণের কাছে সমাজের চিন্তাভাবনা তুলে ধরবেন, সেটা খুবই ন্যায্য প্রত্যাশা। সেটা লিখে হতে পারে, কথায় হতে পারে কিংবা অন্য কোনভাবে; প্রযুক্তির এখন নানান আবিষ্কার ঘটছে। গণমাধ্যমের  কৃৎকৌশলগত দিকেরও রূপান্তর ঘটছে। গণমাধ্যমের কাজ তথ্য তুলে ধরা, সমাজের কথাবার্তা তর্কবিতর্কের পরিসর শক্তিশালী রাখা। প্রতিদিন কত ঘটনাই তো ঘটছে, তার মধ্যে গণমাধ্যম কোনটা দেখছে, এবং কোনটা তুলে ধরছে সেটা দেখে তাদের পক্ষপাত বা স্বার্থের দিক বোঝা যায়। কিন্তু সমষ্টির স্বার্থ ধারণ করবার মধ্য দিয়েই গণমাধ্যম একটি জনগোষ্ঠীকে বিশ্বে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।

[২]

দীর্ঘদিন ধরে নানা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে গণমাধ্যম এর সাথে আমাদের অনেককে সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। কোন একটি প্রতিবাদ অনুষ্ঠান করলাম, অথচ গণমাধ্যমে তা আসলো না - এমনটা আমরা চাই নি কখনো। তাই সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো, বার বার ফোন করা ইত্যাদি আমাদের অনুষ্ঠান আয়োজনের গুরুত্বপুর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। সেই হিশাবে আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে যদিও বাংলাদেশে গণমাধ্যমে আমাদের কর্মকাণ্ড কিছুটা প্রচার পেয়েছে; কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যায় গণমাধ্যমের দৃষ্টি সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে নারীদের প্রতি কতটুকু প্রসারিত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিতেই সমাজকে দেখে এবং সেভাবেই তথ্য উপস্থাপন করে। সমাজটা পুরুষের, এখানে নারীরা বাস করে ঠিকই কিন্তু তারা তথ্যের মূল বিষয় হয় না। নারী সংবাদ হয় বিশেষ কারনে। সংবাদ হতে হলে নারীকে নির্যাতিত হতে হয়, ধর্ষিত হতে হয়, কিংবা অতি মেধাবী হতে হয় কিংবা এমন কিছু করতে হয় যা আর দশজনে করে না। সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে নারীকে দেখে না। মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে এখনও আমাদের পত্রিকার শিরোনামে দেখতে হয় “নারী ও শিশুসহ ২০ জন যাত্রী নিহত” । অর্থাৎ ‘যাত্রী’ মানেই পুরুষ, তাই  নারী ও শিশুর কথা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। গণমাধ্যমের এই পুরুষতান্ত্রিক ভাষার বিষয়ে অনেক দিন থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু তার সমাধান আসছে না। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও খুব বেশি দৃষ্টিকটু লাগে যখন নারী ক্রিকেট খেলোয়াড়, নারী ফুটবল খেলোয়াড় বলে তাদের আলাদা এবং গৌণ করে ফেলা হয়। সেকেন্ড ক্লাস মর্যাদা দেয়ার মতো। গণমাধ্যমে এই বিষয়গুলো এতো সহজ ভাবে উঠে আসে যে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তোলে না। মনে করে এটাই স্বাভাবিক। 

আবার নারীদের জন্যে যে সকল বিষয় গুরুত্বপুর্ণ, সেরকম সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয় গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে যায়। যেমন নারীদের চলাচলের নিরাপত্তার প্রশ্ন। রাতে কোন নারী পথে ঘাটে কোন হেনস্থার শিকার হলে গণমাধ্যমে এমনভাবে উঠে আসে যে সমাজে একধরণের বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আসলে কি মেয়েটি না গেলেই পারতো না? এরপর কিছু নিরাপত্তার অভাব নিয়ে তথ্য দিয়ে গণমাধ্যম চুপ মেরে যায়। তেমনি অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা বা দারিদ্র্য নারীর দৃষ্টিতে দেখলে কি হোত সেই দেখার চোখ গণমাধ্যমে দেখা যায় না।

বাজারি প্রতিযোগিতার জন্য গণমাধ্যম ‘স্টার’ বা সেন্সেশনাল ঘটনা খোঁজে। এটা খুব সমস্যা তৈরি করে। আমরা জানি বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীন নয়, তারা একদিকে সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মের জালে আটকে থাকে অন্যদিকে তাদের নিজেদের “হাউজের” বিশেষ চরিত্র ও স্বার্থ বজায় রাখতে হয়। এই স্টার কেন্দ্রিক গণমাধ্যমের ভুমিকার একটি ঘটনায় আমি নিজে যা দেখেছি তা একটু তুলে ধরছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনুস খ্যাতিমান ব্যক্তি, তিনি বিশ্বে সবার কাছেই শ্রদ্ধেয়। এমনকি যারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁরাও তাঁর আর্থ-সামাজিক পরীক্ষা নিরীক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। এর কারণ হোল আমাদের মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে উন্নতির সদর রাস্তায় তোলা মোটেও সহজ কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ার সময় আমি তাঁর ছাত্রী হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তাঁর কাজ আমি ঘনিষ্ঠ ভাবে বোঝার চেষ্টা করি। তিনি ঘরে বসে কোন তত্ত্ব দেন নাই, মাঠে কাজ করে মাঠের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে একটা পথ দেখিয়েছেন। সারা বিশ্বে তা প্রশংসিত হয়েছে, তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। যাঁরা বড় কাজ করেন তাঁদের তত্ত্ব, কর্মপদ্ধতি, কৌশল ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর তর্কবিতর্ক হতে পারে। এটাই একটি জনগোষ্ঠিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথ। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা তিনি পৃথিবীর সর্বত্র বিপুল ভালবাসা পেয়েছেন। যার মূল্য অপরিসীম। তিনি বাংলাদেশে নবেল শান্তি পুরষ্কার আনতে পেরেছেন, নোবেল পুরস্কারকে বিরাট কিছু ভাবতে হবে সেটা নয়, কিন্তু তাঁর এই স্বীকৃতিকে আমি  বাংলাদেশের জন্য গৌরবের মনে করি।

অথচ বাংলাদেশে, তাঁর নিজ দেশে, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা নির্যাতিত এবং অপমানিত। সহজ ভাষায় তাঁরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার। রাষ্ট্র তাদের ‘আসামী’ বানিয়ে ছেড়েছে। আইনকে অস্ত্র হিশাবে ব্যবহার করে কাউকে কতো ভাবে হেনস্থা করা যায় তার নমুনা হিশেবে ড. ইউনুস অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক নজির হয়ে থাকবেন।

ড ইউনুস প্রসংগ আনছি কারণ আমি নিজে দেখেছি একজন ‘স্টার’কে গণমাধ্যম কিভাবে তুলে ধরতে চায়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ জানুয়ারি।  শ্রম আপীল আদালতে ড মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর তিন জন সহকর্মী পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহানকে হাজির হতে হয়েছিল আপীল করার জন্যে। তাঁদের পরিচয় তাঁরা ‘আসামী’। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম সংহতি প্রকাশের জন্য। তাঁর আইনজীবি আবদুল্লাহ আল মামুন খুব দক্ষতার সাথে আর্জি উপস্থাপন করলেন এবং ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম এ আউয়াল (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) তাঁদের স্থায়ী জামিন দিলেন এবং পরবর্তী শুনানীর তারিখ মার্চ মাসের ৩ তারিখ দিলেন। যথারীতি আদালত থেকে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা বের হয়ে আসলে অপেক্ষমান সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। ঘিরে ধরেন বললে ভুল হবে, আসলে তারা রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন। টিভি ক্যামেরা গুলো সারি সারি করে দাঁড়ানো, মাইক হাতে নিয়ে সাংবাদিকরা তাঁর কাছেই ভিড় করেছেন। নড়ার কোন উপায় নেই। তাছাড়া অন-লাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা মোবাইল ফোন নিয়ে তো আছেনই।

সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্নবান ছুঁড়ে চলেছেন। কেউ বলছেন, স্যার আপনি দেশের সাংবাদিকদের সাথে কম কথা বলেন, কেউ বলছেন এই রায়ে আপনার মতামত কি; কেউ বলছেন স্যার আপনি কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার? ইত্যাদি ইত্যাদি। স্যারের চেহারায় দৃঢ়তার কোন অভাব ছিল না, কিন্তু কেন জানি একটু মলিন ছিলেন। জামিন হয়েছে, এতে তিনি কতটুকু খুশি হয়েছেন বোঝা গেল না। অথচ জানুয়ারি মাসের এক তারিখে যখন তাঁর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হোল তখন তিনি হাসছিলেন; ভি চিহ্ন দেখিয়ে ছবি তুললেন সবার সাথে। সাংবাদিকদের বলেছেন ‘যে অপরাধ করিনি তার জন্যে সাজা পেলাম। এই ব্যাথা রয়ে গেল’। এর বেশি তিনি কোন অভিযোগ করেন নাই। তিনি হেসেই কথা বললেন। কিন্তু এবার ঠিক উল্টো।

ড ইউনুস সাংবাদিকদের কোন কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন আপনারা শুধু আমার কথা শুনতে চান। কিন্তু আমার সাথে আর তিন জন যারা “আসামী” হয়েছেন তাদেরকেও চিনতে হবে। এই বলে তিনি নুরজাহান বেগম, আশরাফুল হাসান এবং এম শাজাহান সম্পর্কে একের পর এক বলতে থাকলেন। তাঁদের অবদান, তাঁদের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। কথা একটু দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে কি করে স্বপ্নের বীজতলা তিনি রোপণ করেছেন, কী স্বপ্ন তিনি দেখেছেন এ সম্পর্কে বলে গেলেন একনাগাড়ে। মাঝখানে দুএকজন সাংবাদিক তাঁকে অন্য প্রশ্ন করতে চাইলেও তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। এই কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি থামছিলেন না । তিনি বললেন আপনাদের একটু ধৈর্য্য ধরে এই কথা শুনতে হবে।

মামলা সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া সাংবাদিকদের দায়িত্ব। অথচ আমাদের দেশের সাংবাদিকরা এই কাজটা নিজ উদ্যোগে করছেন না। এটা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। তিনি বলেন "আরেকটা জিনিস পরিষ্কার করি..এটা আমার বলা দরকার। সরকার বার বার বলতেছে, সর্বোচ্চ জায়গা থেকে বলতেছে যে, এই মামলাটা সরকার করেনি। কিন্তু সেটা সত্য নয়। আপনারা তো সাক্ষী...মামলা সরকার করছে, না শ্রমিক করছে! আপনারা বলেন, ...এইটা মিথ্যা কথা। এইটা ঠিক না। কলকারখানা অধিদপ্তর সরকারেরই প্রতিষ্ঠান। মামলা সরকার করেছে, শ্রমিকেরা করেনি”।

ড ইউনুসের সেদিনের আকুতি দেখেছিলাম তাঁর সহকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য, যারা গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ, সাধারণ আসামী। তাদের প্রতি অন্যায় হোল কিনা, তারা এভাবে হেনস্থা হচ্ছেন কেন সেই ধরণের কোন প্রশ্নই তাঁদের করা হোল না, কারণ তাঁরা কোন ‘স্টার’ নন। এই চারজনের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন, গণমাধ্যম তাঁর প্রতিও কোন আগ্রহ দেখায় নি।

এই ঘটনা আমাকে খুবই ভাবিয়েছে। আমি ধন্যবাদ দেই ড মুহাম্মদ ইউনুসকে যে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নবান উপেক্ষা করে এঁদের পরিচয় করিয়ে স্টার-কেন্দ্রিক প্রশ্নবাণ উপেক্ষা করেছেন। বড় মাপের মানুষদের চেনা আসলে খবুই সহজ। তার জন্য বিশেষ বিদ্যা লাগে না, কাণ্ডজ্ঞানই যথেষ্ট। আমি জানি না গণ মাধ্যম তাঁর ইঙ্গিত কত টুকু নিয়েছে কিম্বা বুঝেছে। কারণ এরপরও ড ইউনুস ছাড়া অন্য “আসামী”দের আসামীই করে রাখা হয়েছে। 

গণমাধ্যম এখনও ‘গণ’নয়, তাদের দৃষ্টি শুধুই বিশেষের প্রতি। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

ফরিদা আখতার: নারী প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী