কণ্টকাকীর্ণ পথে মোদির তৃতীয় মেয়াদে যাত্রা

তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদি। ফেসবুক

নরেন্দ্র দামোদার দাস মোদি টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। তৃতীয়বারের এই পথ চলা কেমন হবে তা নিয়ে সেখানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা মতামত দিয়ে চলেছেন। 

একজন বিশ্লেষক বলেছেন, আগে ছিলেন স্বনির্ভর এখন হলেন পরনির্ভরশীল। এর অর্থ হচ্ছে, বিগত দুই মেয়াদে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩০৩। তখন জোটের কোনো শরিক দলকেই তোয়াক্কা করতে হয়নি। কারণ বিজেপি নিজেই ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। এবার ম্যাজিক নাম্বার (২৭২) থেকে ৩১ আসন পিছিয়ে। তাই স্বাভাবিকভাবে শরিকদের ওপর নির্ভর করে চলতে হবে। অর্থাৎ বিগত দশ বছর মোদিজির চলার পথ ছিল কুসুমাস্তীর্ণ। কিন্তু এবারের পথ কণ্টকাকীর্ণ হবে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।

ইতিমধ্যে প্রকাশিত একটি খবর নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। খবরটি হলো, কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে নীতিশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর অফার দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, শপথ নেওয়ার আগের দিন এ খবর প্রকাশের অর্থ হচ্ছে শুরু থেকে বিজেপিকে চাপে রাখা। সেটা বোঝা যায় মোদির বাচনভঙ্গিতে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আগে তিনি ‌আমিত্বের অহংকারে ডুবে ছিলেন। আমিই ‘গ্যারন্টি’, আমি এটা করবে, আমি ওটা করবে ইত্যাদি। কিন্তু তৃতীয় মেয়াদের শপথ অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি আমি বাদ দিয়ে বারবার আমরা, আমরা উচ্চারণ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি এ ধরনের জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে অভ্যস্ত নন যে জোটে তার নিজ দলের ম্যাজিক নাম্বার নেই। অতীতে দুই মেয়াদে  তিনি এমন একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যে সরকারে তার দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। তখন শরিক দলগুলোর কাউকে পাত্তা দেননি। এখন শরিকদের সমর্থনের ওপর তার সরকারের টিকে থাকা নির্ভর করছে। তাই এ ক্ষেত্রে শরিকদের অনেক আবদার তাকে আমলে নিতে হবে যা মোদির ধাতে নেই।

এ ছাড়া তার নিজ দলের ভেতরে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছ তা সামাল দেওয়া, নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং প্রতিবেশীসহ ভূ-রাজনৈতিক জটিল সমীকরণে ভারতের অবস্থান নির্ণয়-ইত্যাদি অনেক বিষয়ে আগের মতো করে তিনি চলতে পারবেন না। অবশ্যই এ সব ব্যাপারে শরিকদের মতামতকে গ্রাহ্য করতেতে হবে।

অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক জটিল সমীকরণের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সুখকর নয়। আরেক বৃহৎ প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তো ‘দা-কুমড়া’। একজন কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার ঘটনা নিয়ে কানাডার সঙ্গেও ভারতের  সম্পর্ক বৈরিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়া মানে ‘ফাইভ আইস’র সঙ্গে  সম্পর্কের অবনতি ঘটা। ফাইভ আইস অর্থ যুক্তরাষ্ট্র, কানডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। সুতরাং ভূ- রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নরেন্দ্র মোদিকে একটি পিচ্ছিল পথে হাঁটতে হবে। এখন দেখার বিষয় যে, ভারত কোন পথে হাঁটবে!

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ঢাকা।

আরও পড়ুন: শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি

আরও পড়ুন: সব করেও কেন বিজেপির ব্যর্থতা