দুবাই না আয়নাঘর— বেনজীর নিয়ে নজিরবিহীন গুজব

বেনজীর আহমেদ

পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ একসময় দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন। ওনার ক্ষমতার দৌড় ছিল খোদ সরকারের অন্দরমহল পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন কাঁধে নিয়ে ডিপ্লোমেটিক ইমিউনিটি বা কূটনৈতিক অনাক্রম্যতাকে ব্যবহার করে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই যুক্তরাষ্ট্রেই। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দেওয়া বলে যদি কোন কিছু থাকে তা বেনজীর করেছেন ওনার নামের সাথে মিল রেখেই— নজিরবিহীনভাবে। 

তাই গোপালগঞ্জের এই পুলিশ অফিসারের বাহিনীতে দ্রুত উত্থান এবং প্রায় একই গতিতে পতন অবাক করেছে সবাইকে।

ক্ষমতায় থাকার সময় গুম-দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের পেছনে তার কথিত সংশ্লিষ্টতার খবর অনেক বড় বড় সংবাদপত্র ছাপতে সাহস পায়নি কখনও। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশের সর্ববৃহৎ ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম নিজে। এক সভায় তিনি বলেছেন ‘এসব কুকর্মের খবর’ তার পত্রিকা জানতো কিন্তু ভয়ে ছাপাতে পারতো না।

বেনজীরের পতন শুরু হয় জানুয়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনের পরপর। বিভিন্ন সংবাদপত্র ছেয়ে যায় তার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের রিপোর্টে। শুরুতে এগুলো সবাইকে চমকে দিলেও এর পরেই অবসর নেয়া এবং চাকুরীরত বিভিন্ন পুলিশ ও সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রিপোর্ট হতে থাকে। এসবের মধ্যে বেনজীর আহমদের দেশত্যাগের খবর আসে। দেশ ছাড়েন আরেক সাবেক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান।

বেনজীর আহমেদ নিয়ে পরে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, উনি বৈধ পথেই দেশ ছেড়েছেন। দ্য মিরর এশিয়া বেনজিরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। তার বহির্গমনের নথিও পাওয়া যায়নি। বলা হয় তিনি এখন দুবাই-এ।

কিন্তু তাকে দুবাইতে দেখা যায়নি, যেখানে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মসূত্রে থাকেন এবং ভ্রমণে যান। ব্যাংককের এক রেস্তোরায় বেনজিরের একটি পুরোনো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ালেও তা বেশ পুরোনো। এটি ওনার পতনের আগের ছবি।

পুলিশের এই বড় কর্তার সরকারী অনুগ্রহ থেকে খসে পড়া বিভিন্ন গুজবের জন্ম দিয়েছে। বলা হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যত সংকুচিত হয়, গুজব তত দ্রুত তার ডানা বিস্তার করে। রাজধানীর বাতাসে এখন এরকম মুখরোচক অনেক গল্প ভেসে বেড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে বেনজীর দেশ ছাড়েননি, তিনি কার্যত বন্দী। এমনও বলা হচ্ছে উনি সরকারের বিভিন্ন অবৈধ কাজের দালিলিক প্রমাণ ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাই পুলিশের এই সাবেক প্রধানকে আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

সরকারের উচিত বেনজীর আহমেদ নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করা। পুলিশের এই সাবেক প্রধান এসব কথিত অপকর্ম কার বা কাদের ছত্র ছায়ায় করে বেড়াতে পারলেন, তা সরকারকে জাতির সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। এরকম একজন কথিত দুর্নীতবাজ যদি বছরের পর বছর সরকারের নাকের ডগায় “কুকর্ম” করে বেড়াতে পারেন— প্রশাসনে আর কত বেনজীর এসব কাজ করে বেড়াচ্ছে তা ভেবে একজন সাধারণ মানুষের শিহরিত হওয়া স্বাভাবিক।

অভিযোগ আছে যে বেনজীরসহ কিছু পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন সাংবাদিকদের মধ্যে বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর উদ্দেশ্য সরকারকে একটা দুর্নীতিমুক্ত ক্লিন ইমেজ দেয়া। বিষয়টি এমন হলে তা হবে খুবই পরিতাপের বিষয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুধু বাছাই করা কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে চালানো মানুষের চোখে ধুলো দেয়া বৈ কিছু না।