সরকার হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে : ফখরুল

সরকার হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে : ফখরুল

একটা বেনজীর একটা আজিজ নয়, এই সরকার হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (১ জুন) বিকেলে গাজীপুর চৌরাস্তায় সাগর সৈকত কনভেনশন হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে খবরের কাগজ খুললেই কি দেখেন আপনারা? দেখবেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। কখন করেছেন, যখন তিনি র‌্যাবের ডিজি ছিলেন, পুলিশে আইজি ছিলেন তখন তৈরি করেছেন। যার বেতন সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেশি হয় না, সেই লোকের এখন দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যখন এটা ফাঁস হয়ে গেল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন স্যাংশন দিলো তারপর কিন্তু তাকে তারা আইজিপি করেছে এবং সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সরকারকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো তোমরা তো সব দুর্নীতি পরায়ন লোকগুলোকে, যারা মানুষের অধিকারকে খুন করেছে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করেছে তাদের পুরস্কৃত করছো। সুতরাং তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বেনজীর মে মাসের ৪ তারিখে পুরো পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছে। কাগজে কলমে বলছে মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট সেখান থেকে ৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। ৬০ কোটি টাকাই নয়, আরও অসংখ্য টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এরা কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? সরকার কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? কিন্তু আমরা যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাই, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে আমাদেরকে দেড় ঘণ্টা-দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। আর তাকে (বেনজীর) জামাই আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তুলে দিয়েছে, সে যেন দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এই সরকার হচ্ছে চোরের রাজা, বাটপার। যারা চুরি করেছে তাদের সব সময়ই প্রশ্রয় দিয়েছে।

সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ, যার একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল আল-জাজিরাতে। তিনি কীভাবে তার ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংশন দেওয়ার পর এখন তাদের টনক নড়েছে। এখন বলছে আমরা এখন তদন্ত করব।

তিনি বলেন, আজকে দেশে, যে ভূখণ্ডে বাস করি আমরা তাকে বলি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশটা স্বাধীন করবার জন্য যাদের দায়িত্ব ছিল তখন তারা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন পাুক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে, তাদের বেশিরভাগ নেতাই পালিয়ে চলে গেছে এবং মূল নেতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ কথাগুলো বললে তারা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটাই হলো চিরন্তন সত্য। শহীদ জিয়া নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। শহীদ জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাই করেননি, এরপর যখনই বাংলাদেশের সামনে আরও বড় সংকট উপস্থিত হয়েছে ৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তখন শহীদ জিয়া বাংলাদেশের মানুষের সামনে ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে যে শাসকগোষ্ঠী, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, আওয়ামীলীগ সেদিন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তারাই কিন্তু ক্ষমতায় ছিল এবং ওই ৪-৫ বছরের  মধ্যে তারা বাংলাদেশে একটা দুশাসনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এতে বাংলাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। তাদের দুর্নীতি এবং অযোগ্যতা এবং দুশাসনের কারণে সেদিন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। না খেতে পেয়ে সেদিন লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কাপড় ছিল না, রংপুরের বাসন্তী তার লজ্জা নিবারণের জন্য এক টুকরো জাল দিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করেছিল। এই হচ্ছে ইতিহাস, এই হচ্ছে সত্য কথা। এই কথাগুলো আজকাল তারা বলে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেউ কথাগুলো জানে না। কথাগুলো যদি বলে তাকে আবার জেলে দেবে অথবা সংবিধান বিরোধী বলে মামলা করবে।

অনুষ্ঠান শেষে জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের পর খাবার বিতরণ করা হয়।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল ইসলাম, ড. অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান এলিচ, আব্দুস সালাম শামীম, আনোয়ারা বেগম, মাহবুব আলম শুক্কুর, ভিপি জয়নাল আবেদীন তালুকদার, সুরুজ আহমেদ, হুমায়ূন কবির রাজু, মহানগর কৃষকদলের সভাপতি আতাউর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা সাজিদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার বীনা প্রমুখ।