ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করেছে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি।

ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মঙ্গলবার নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন বন্দী, এখানে ভয়াবহ দুঃশাসন চলছে। গুম, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ার আর গায়েবি মামলায় সারাদেশে এক ভীতি ও শঙ্কার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে ডামি আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী সংবিধানকে পদদলিত করে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রেখে জনগণকে অনন্তশৃঙ্খলে বন্দি করে রেখেছে।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি সর্বগ্রাসী রাষ্ট্র। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ছিটেফোটাও নেই। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চাকায়। সাংবাদিক হত্যা এবং অসংখ্য সাংবাদিককে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।

"একের পর এক কালাকানুন প্রণয়ন করে সংবাদপত্র, টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে বিরোধীদের কণ্ঠ শোনা না যায়। আর এই ধারাবাহিকতায় এদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে। এমনকি মুমূর্ষু দেশনেত্রীর সুচিকিৎসাকেও ডামি সরকার বেআইনিভাবে বাধা প্রদান করছে।"

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ডামি আওয়ামী সরকার গোটা দেশটাকেই বাকরুদ্ধ করে রেখেছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলেই লেলিয়ে দেয়া হয় পেটোয়া বাহিনীকে। মানবাধিকার ও মানবতার তোয়াক্কা না করে এই সরকারের পোষ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ও শিশুদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে।

তারেক রহমান বলেন, মুক্তির আদর্শই হচ্ছে গণতন্ত্র। বাংলাদেশের সেই গণতন্ত্র এখন অদৃশ্য। একমাত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের জন্য বহুদলীয় ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভোটারবিহীন আওয়ামী দখলদার সরকার বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দল ও মানুষদের ওপর বেপরোয়া জুলুম-নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী শক্তি যেন সরকারের বিরুদ্ধে মাথাচাড়া না দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নির্যাতিতদের সমর্থনে প্রতি বছর ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়। এই দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এ দিবসটির তাৎপর্য অপরিসীম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে জাতিসমূহ স্বাধীনতা অর্জন করলেও এখনও বিশ্ব জুড়ে সহিংসতা ও রক্তোন্মদনা বন্ধ হয়নি।

তারেক রহমান বলেন, সংঘাত ও বিরোধের কারণেই সাধারণ মানুষেরা দেশে-দেশে নিহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর তাদের বিরোধীদের ওপর সীমাহীন ক্রোধে আচ্ছন্ন থাকে, এই কারণে দমননীতির অবলম্বন করে তারা বিরোধী মত ও ব্যক্তিদের মারাত্মক নির্যাতন করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, অথচ স্বৈরাচারী শাসকদের হুকুমে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গুম, খুনসহ মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। নিষ্ঠুর একনায়কেরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বে থাকলে রাষ্ট্রের অমানবিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মানুষ নানাভাবে উৎপীড়নের শিকার হয়। সারা বিশ্ব আজ যান্ত্রিক সভ্যতায় এগিয়ে গেলেও মানবিক সভ্যতা বেশিদূর এগোতে পারেনি।

তারেক রহমান বলেন, আমি তাই নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষকে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে নানা প্রতিকূলতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। মানবিকবোধে উদ্বুদ্ধ বিশ্বের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী গোষ্ঠী ও স্বৈরশাসককে পরাস্ত করা সম্ভব।