আসুন আজ সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক হই

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করতে গিয়ে আজও হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। উদ্দেশ্য একটিই, গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটক করে গণতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য নির্বাসিত করা। করেছেও তাই। অবৈধ সরকার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেছে। রাতের ভোট দিনে করছে। ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে।

তিনি বলেন, কবিরা বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুইবার নয়। ভয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে সাহস করার প্রতিরোধ করতে হবে। তাই সকল অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। আর এর জন্য তরুণদের জেগে উঠতে হবে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমাবেশে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হন। 

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমাবেশের মুল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। শহীদ জিয়া যখন নিজের জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন দুই শিশু সন্তানসহ গ্রেপ্তার হোন খালেদা জিয়া। স্বামী যুদ্ধের ময়দানে, স্ত্রী বন্দি। তাই বলি বেগম জিয়া দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নয়, এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও তার প্রধান ভূমিকা ছিল। তিনি ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। 

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ১৫ বছর আন্দোলন করছি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। তার কয়েকদিন আগে হোটেল মেরিডিয়ানে তিনি বলেছিলেন আমাকে আটক করা হতে পারে। আপনারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না, যতদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না, ততদিন সংগ্রাম চলবেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো লুট করে টাকা বিদেশে পাচার করছে। স্তম্ভিত হই, যখন দেখি সাবেক সেনাপ্রধান গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য জড়িত। সাবেক পুলিশপ্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এতো মাত্র শুরু। এরকম আজিজ, বেনজীর ও মতিউর হাজার হাজার আছে। আজকে বড়বড় রাঘব-বোয়ালকে ধরা হচ্ছে না। অথচ, গণতন্ত্রের মাকে ছয়বছর যাবত বন্দি রাখা হয়েছে। সময় আছে, এখনও সময় আছে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। নতুবা যে কেনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।

ভারতের সাথে চুক্তি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, চুক্তি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের আইন বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এটি অসম চুক্তি। আমরা পানি চাই। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। মানুষ এ চুক্তিতে কী পেয়েছে? পেয়েছে ঘৃণা। সম্পদ লুন্ঠন করার পায়তারা। 

তিনি বলেন, আসুন আজ সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক হই। আজকে তারেক রহমানকে মিথ্যা সাজা দিয়ে দেশান্তর করে রাখা হয়েছে। তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। সকল রাজবন্দী মুক্তি চাই। আন্দোলনে নিহত সকলের ক্ষতিপূরণ চাই।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২৮ তারিখে আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে পারি নাই,
কারণ আমাদের মৃত্যু ভয় ছিল। খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণে পুরোদেশ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সারাদেশ আজ চোর বাটপারে ভরে গেছে। ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার মিডিয়ার কারণে সরকারের অনেক অপকর্ম ফাঁস হচ্ছে।

তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকতে পারে প্রভু নয়। আজকে আওয়ামী লীগ ভারতের সেবা দাসে পরিণত হয়েছে। 

আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন, এদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ, সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির যে আন্দোলন তা শুরু হয়েছে। আমরা আর সুচিকিৎসার দাবি করছি না। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে যায় না। খালেদা বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে গণতন্ত্র। 

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান।

এছাড়াও তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, জাসাস সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, মৎসজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ঢাকা জেলার সভাপতি আবু আশফাক, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরাজ ইকবাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন।