পুলিশি বাধায় পণ্ড বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল

ছবিটি বাসদের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ-ব্যাংক ডাকাতি রোধ, দুর্নীতিবাজদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের নেতারা মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পল্টন মোড়ে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন তারা।

এ সময় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাস) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকারি দলের নেতারা বলেন, সরকার নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। বেনজীর সাহেব যখন পুলিশপ্রধান এবং র‍্যাবের ডিজি ছিলেন, তখন তিনি অবৈধভাবে সাতটি বেসামরিক পাসপোর্ট করেছেন। তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নমুনা দেখা যাচ্ছে।’

সরকারি দল ও বিভিন্ন সংস্থা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুদক যখন বেনজীরের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছিল, তখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না। এটা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়ারই শামিল।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে জোটের সমন্বয়ক বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের নামে মামলা আর গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই তারা ব্যাংকের সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। মতিউরও নাকি মাথা টাক করে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিজিবি কী করে?’

তিনি বলেন, ‘আজকের দুর্নীতিবাজরা গলা, মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আবার এই দুর্নীতিবাজদের পক্ষে বিবৃতি দেয়। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজকে দুর্নীতি। এই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে হবে।’

এই বাম নেতা জানান, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার ও বিচার, অর্থ পাচার রোধ, খেলাপি ঋণ উদ্ধারসহ নানা বিষয়ে জোটের ধারাবাহিক আন্দোলন চলমান থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৬ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

এ দিকে বাধা প্রসঙ্গে রমনা জোনের শাহবাগ থানার পেট্রল ইন্সপেক্টর সরদার বুলবুল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট আশপাশের এলাকায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আমরা নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছি। তারা চেষ্টা করেছিল ব্যারিকেড ছেড়ে চলে যাওয়ার। পরে তাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আমাদের অনুরোধ রেখে এখানেই তাদের প্রোগ্রাম স্থগিত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মূল বিষয়টা বাধা দেওয়া না, আমরা সমন্বয় সাধন করেছি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। আমরা তাদের শুধু একটি ব্যারিকেড দিয়ে এখানে (পল্টন মোড়) থামিয়ে দিয়েছি। এখানে হাতাহাতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’

একই দাবিতে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মহানগরে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় এবং জেলায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।

রাজধানীর এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহিন রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।