শিক্ষকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: রিজভী

ফাইল ছবি

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের নামে সরকার শিক্ষকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘শিক্ষকদের পেনশন বিরোধী প্রতিবাদকে বিএনপি সমর্থন জানায়। এই সরকার প্রত্যয় স্কিমের নামে শিক্ষকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে রেল করিডোর চুক্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করেছে সরকার। ভারতের সঙ্গে করা এসব চুক্তি বাংলাদেশকে চিরদিনের জন্য ক্রীতদাস বানাবে।’ এ সময় সরকার যাই করুক, বাংলাদেশের জনগণ দিল্লির দাসত্ব মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিরোধী নেতাকর্মীদের নতুন করে আবারও গুম করা হচ্ছে- অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থ আওয়ামী সরকার পুনরায় গুমের মত নৃশংস পন্থা অবলম্বন করে আবারও জনমনে ভীতি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন করে আবার গুম শুরু করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘গতকাল রাত আড়াইটার সময় রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল-আমিনকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ৩০ জুন দুপুর ১২টার সময় সাতক্ষীরা জেলাধীন কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামরুজ্জামানকে রতনপুরস্থ নিজ বাড়ি থেকে ডিবির এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমি অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর আহ্বান জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে নানা চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ এহেন দুই সরকারের সমাঝোতার উদ্যোগ অসম এবং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করে। এতে বাংলাদেশের মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ট্রানজিট ও এশিয়ান হাইওয়ের নামে শেখ হাসিনা মূলত ভারতকে করিডোর দিচ্ছেন। এটি চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর অভিসন্ধি।’

এদিন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম মহাসচিব খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঘোষিত সারাদেশের জেলা সদরের সমাবেশে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলযোগে রামদা, চাপাতি এবং ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নাটোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায়। হামলায় বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাটোর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা শ্রমিকদলের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপি আহ্বায়ক চপল, পৌর বিএনপি নেতা হিপলু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাস্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিজান, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে এবং কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন সিকদার, মুশফিকুর রহমান লিটু বিশ্বাস, সুমন গাজী, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম দীপু, রাঙ্গাবালী স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল মিয়াসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করে গুরুতর আহত করে।’

এছাড়া বাগেরহাট জেলা বিএনপি কার্যালয় আজ সকাল থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির নির্দেশনায় পুলিশ বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে, কার্যালয়ের ভেতর বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ নেতৃবৃন্দ অবরুদ্ধ আছেন বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।

এ ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি এ ঘটনার শুধুমাত্র নিন্দা বা ঘৃণাই জানাচ্ছি না, প্রতিটি অপকর্মের দায় তাদের নিতে হবে। দায়ী কেউ-ই তালিকার বাইরে থাকবেন না। যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও সন্ত্রাসীরা এসব কাজ করছেন, তাদের মনে রাখতে হবে চিরদিন কারো ক্ষমতা থাকে না এবং থাকবেও না। পতন অত্যাসন্ন, পতন হবেই- খুব দ্রুত হবে সেই পতন। যেভাবে দেশ বিক্রি চলছে, যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে- এবার সার্বিক একটি ব্যাপক জনগণের উত্থানের মধ্যদিয়ে পতন ঘটবে এই সরকারের।