ভারত সরকারের সিদ্ধান্তেই সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা: তৌহিদ হোসেন

মো. তৌহিদ হাসান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতিনিয়তই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশিরা হত্যার শিকার হচ্ছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের পক্ষ থেকে নানা কথা বলা হলেও কার্যত তার কোনো প্রতিফলন নেই। বরং এ ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে পরপর তিনটি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের মধ্যেও ঘটেছে সীমান্ত হত্যার ঘটনা। এ বিষয়টি নিয়ে দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি।

দ্য মিরর এশিয়া: কী কারণে সীমান্ত হত্যা হচ্ছে বলে মনে করেন?

তৌহিদ হোসেন: এটার কারণ আমি বলতে পারবো না। কারণ... কোনো কিছুই এটাকে জাস্টিফাই করে না। যেহেতু কোনো কিছু এটাকে জাস্টিফাই করে না, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই  ‍মুহূর্তে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। প্রতিশ্রুতি ছিল যে, বর্ডার কিলিং নিয়ে আলোচনা হবে। এটা হয়নি। তারা অনেক সময় নিয়েছেন, কী করেছেন? বাংলাদেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষকে বলতে শোনা যায়, এবছর সীমান্ত হত্যা কম হয়েছে। সীমান্ত হত্যা কমেছে। এটা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন তারা। আবার, এমনও বলতে শোনা যায়, যাদেরকে বিএসএফ গুলি করে মারছে; তারা অপরাধী ছিল। এমনভাবে বলা হয়, অপরাধীরা রাতে ওখানে গেছে, তাই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি ভারতীয়দের সাথে তালমিলিয়ে আমাদের মন্ত্রীরাও বিষয়টাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, অপরাধীরাই গুলি খেয়ে মরছেন।

দ্য মিরর এশিয়া: অপরাধীদেরতো আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ আছে, কিন্তু সেটা কি করা হচ্ছে?

তৌহিদ হোসেন: অপরাধতো মানুষ করেই। অপরাধ করলে তাদের জেলখানায় নেওয়ার কথা। তার বিচারালয়ে হাজির হবার কথা। জজ সাহেব বিচার করে বলবেন, তাকে একদিন, এক মাস কিংবা এক বছর জেল দেওয়া হোক। হয় তিনি দণ্ডিত হবেন, নাহলে মুক্তি পাবেন। কিন্তু অপরাধ করেছে, তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে, এটা কোনোভাবেই জাস্টিফাই হয় না।

দ্য মিরর এশিয়া: সীমান্তে যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। তারা (বিএসএফ) ডেড বডি নিয়ে নির্যাতনও করে। স্বজনদের অভিযোগ আছে।

তৌহিদ হোসেন: এটা আমি বলতে পারবো না। এটা আমি কখনো ফলো-আপ করিনি যে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে কি-না। এরকম উদারহণতো আছেই অসংখ্য। সবচেয়ে বড় কথা তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। 

 

আরো পড়ুন: মহানন্দা যেভাবে দখলে রেখেছে বিএসএফ

 

দ্য মিরর এশিয়া: কোনো আইন আছে কি-না যেটা বর্ডার কিলিংকে বন্ধ করতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: কাজটাতো আইনসম্মত না। কোথাও কোনো আইন নেই যে বর্ডার পার হলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। তারা অপরাধ করতে যাচ্ছিলো এই অভিযোগ আনা হয়। তারা কি করছিল? স্মাগ্লিং? পৃথিবীর এমন কোনো বর্ডার নেই যেখানে স্মাগ্লিং নেই। আমি সম্প্রতি ইউরোপ ঘুরে এসেছি এ বছরে। ওখানেও বর্ডারে স্মাগ্লিং হয়। কিন্তু একটা ঘটনাও শুনিনি যে স্মাগ্লিং করছে বলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

দ্য মিরর এশিয়া: চীনের সাথেওতো ভারতের বর্ডার আছে। কিন্তু চীনের বর্ডারে এরকম হত্যাকাণ্ড দেখা যায় না।

তৌহিদ হোসেন: আপনি যেটা বলছেন, এটা একদম ফাইনাল স্টেজ। সবাই চায় এটা শেষ হোক। দুঃখজনক জিনিস শেষ হোক। এগুলো হলো সিঙ্গেল আউটলাইন। এখানে একটা সিম্পল স্টাটেস্টিক আছে, বাংলাদেশ ইজ দ্য ভিকটিম অব দ্য বর্ডার কিংলিং, যেখানে স্মাগ্লিং-এর সাথে সাথে মানুষ মারা হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একটা উদাহরণ দিতে পারবেন, যেখানে স্মাগ্লিং করার সময় পায়ে গুলি করা হয়েছে। তার মানে যখন গুলি করা হয়, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েই গুলি করা হয়, শুট টু কিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত হাজির করা হয়, কোনো সত্যিকারের যুক্তি নেই এখানে। এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। এটা ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত যে (বাংলাদেশ) বর্ডারে তারা গুলি করে মানুষ মেরে ফেলবে। যদি সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে এটা একদিনে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব।

 

আরো পড়ুন : বিএসএফের গুলিতে নিহতদের শরীরে আঘাতেরও চিহ্ন

 

দ্য মিরর এশিয়া: আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের সরকার বৈঠক করছে, সীমান্তে পতাকা বৈঠক হচ্ছে। সমাধান আসছে না কেন?

তৌহিদ হোসেন: এটাতো আমি প্রথমেই বলেছি। আমি এটার কোনো সমাধান দেখতে পারছি না। যদি না সরকার শক্ত প্রতিবাদ করতে পারে।

দ্য মিরর এশিয়া: আপনাকে ধন্যবাদ। 

তৌহিদ হোসেন: দ্য মিরর এশিয়াকেও ধন্যবাদ।